
জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা)।। একসময় মানুষকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার আসতেন হাট-বাজারে, বসতেন খোলা আকাশের নিচে। কোনো জটিল রোগ হলে ছুটে যেতেন রোগীর বাড়িতে। ফি-এর বদলে অনেক সময় মিলত ফসল বা কিছু নগদ টাকা। প্রচলিত কবিরাজদের ঝাড়ফুঁক আর তাবিজ-কবচের সেই যুগে, তারাই ছিলেন সভ্য চিকিৎসার দিশারী।
সেইসব হাটে বসা ডাক্তাররাই আমাদের শিখিয়েছিলেন যে রোগের সমাধান ঝাড়ফুঁকে নয়, বিজ্ঞানে। তারাই মানুষকে সভ্য করে তুলেছিলেন, চিকিৎসার প্রতি আস্থাবান করে তুলেছিলেন।
আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষের চিকিৎসার চিত্রটা পুরো পাল্টে গেছে। মানুষ এখন রোগ হলে ছুটে যায় ডাক্তারের কাছে, ফি দিয়ে সঠিক চিকিৎসা নেয়। ঝাড়ফুঁক এখন কেবলই জাদুঘরের বস্তু। মানুষের এই আধুনিক মনন আর চিকিৎসার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তোলার পেছনে সেইসব হাটে বসা ডাক্তারদের অবদান ১৩ আনাই।
মানুষ যেমন রোগের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যায়, ফসলও তো রোগাক্রান্ত হয়। এর জন্য প্রয়োজন একজন প্রশিক্ষিত ‘ফসলের ডাক্তার’। ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি এই কাজটিই করছে। তারা ‘অ্যাডাপটেশন ক্লিনিক’-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত কৃষি ডাক্তারদের পাঠাচ্ছে সরাসরি কৃষকের দোরগোড়ায়। হাটে-বাজারে বসছে ফসলের ক্লিনিক। যেখানে কৃষকরা ফসলের সমস্যা নিয়ে আসেন এবং কৃষি ডাক্তাররা তার সমাধান দেন।
আশাশুনি উপজেলার কৃষকরা সত্যিই সৌভাগ্যবান, কারণ তারা এই দারুণ উদ্যোগের প্রথম সুবিধাভোগী। দিনের পর দিন এই ‘কৃষি ডাক্তারদের’ চাহিদা বাড়ছে। তারা কেবল সমস্যার সমাধানই দিচ্ছেন না, বরং কৃষকের আস্থার এক নতুন ঠিকানা হয়ে উঠেছেন। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি সেরা উদ্ভাবন, যা আগামীর কৃষি ব্যবস্থায় আলো ছড়াবেই। বুধবার বিকাল ৩ টায় আশাশুনি বাজারে অ্যাডাপশান ক্লিনিকে ফসল ও গাছ দেখে চিকিৎসা পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন। কৃষিবিদ শাহিন হোসেন ক্লিনিক পরিচালনা করেন। এলাকার কৃষকরা তাদের রোগগ্রস্ত ফসল ও গাছের পাতা-শাখা নিয়ে ক্লিনিকে হাজির হন। সুন্দর পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র পেয়ে কৃষকরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। ব্র্যাকের এলাকা ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা সদর, বুধহাটা ও বড়দল ইউনিয়নে ১৫ দিন পরপর বিভিন্ন গ্রামে কৃষিবিদ ডাক্তার ভ্রাম্যমান ক্লিনিক পরিচালনা করে থাকে। ক্লিনিকে অফিস বেজে সার্ভিস দেয়া হয়ে থাকে। বুধবার আশাশুনি হাটের দিনে অ্যাডাপশান ক্লিনিকে ফসল দেখে রোগ নির্ণয়, রোগের কারণ ও ক্ষতি সম্পর্কে জানানো ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হয়।