
*শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ।
*প্রশংসায় ভাসছেন ইউএনও আলী সুজা।
খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল।। শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে তা শতভাগ সফল করার জন্য বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক এবং ২২টি মাদ্রাসার সুপারদের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
উজিরপুরের শিক্ষা বান্ধব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে ব্যতিক্রমধর্মী এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে ব্যাপক ইতিবাচক দিক হিসেবে উল্লেখ করে ভূয়শী প্রশংসা করেছেন বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের পরিদর্শক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন-উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মতো প্রত্যেকটি উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে আগামীতে মাধ্যমিক পর্যায়ের ফলাফল বিপর্যয় থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি শিক্ষার ব্যাপক মানোন্নয়ন হবে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোক্তা উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা বলেছেন-অতীতে শিক্ষার দ্যুতি ছড়ানো এ উপজেলায় সাক্ষরতার হার প্রায় ৮০%। সম্প্রতি সময়ে উপজেলায় শিক্ষার গুণগতমান ক্রমাগতভাবে নিন্ম থেকে নিন্মতর হয়েছে। উজিরপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার মানের পূর্বের জায়গা ধরে রাখতে পারেনি। যার প্রতিফলন ঘটেছে এবারের তথা ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। প্রত্যেকটি মাধ্যমিক ও সমমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই হতাশাজনক।
তিনি আরও বলেন-শিক্ষা ক্ষেত্রে উজিরপুরের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে উপজেলা প্রশাসনের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। যাতে করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির মাধ্যমে পাসের হার কাঙ্খিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি ও মাদকাসক্তি থেকে সরিয়ে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনা, নিয়মিত লেখাপড়ার সুফল ও গুরুত্ব উপলব্ধিতে সহায়তা করা, শিক্ষকগণকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদ্বুদ্ধ করা, গুটিকয়েক শিক্ষার্থীকে দিয়ে জিপিএ-৫ অর্জনের চেয়ে সকল শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকদের সমান গুরুত্ব দিয়ে পাঠদান করানো, শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধিতে ম্যানেজিং কমিটির তৎপরতা বৃদ্ধি ও অভিভাবকগণকে সম্পৃক্ত করা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সমন্বয়ে আধুনিক পাঠদান পদ্ধতির ব্যবহার, মূল্যায়ন ও ফিডব্যাকের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মাসিক সমাবেশ এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের সংলাপের মাধ্যমে একটি সমনি্বত শিক্ষা পরিবেশ তৈরি করা, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের পাঠদানের ক্ষেত্রে তাদের সদিচ্ছা, ইচ্ছাশক্তি ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি করার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে প্রথম পক্ষ হিসেবে রয়েছেন উজিরপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে রয়েছেন মাধ্যমিক/সমমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। সমঝোতা স্মারক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে রয়েছে-সমঝোতা স্মারকে উল্লেখিত দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং শর্তসমূহ সঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করা, ইচ্ছাকৃত অবহেলা কিংবা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেকোনো সময়ে প্রদত্ত সরকারি নির্দেশনা কিংবা প্রয়োজন মাফিক নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংশোধন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন কিংবা সংযোজন করা।
তেমনি দ্বিতীয় পক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে রয়েছে-বর্ণিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে প্রথম পক্ষকে সার্বিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা, সমঝোতা স্মারকে উল্লিখিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কার্যকর ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, বাছনিক/নির্বাচনি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন শ্রেণির অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসমূহ সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে গ্রহণ করা এবং এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে ওপরের ক্লাশে না উঠানোসহ এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ/অংশগ্রহণের অনুমতি না দেয়া।
স্বাক্ষরিত স্মারকে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-এসব বিষয়ে ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে অনতিবিলম্বে সতর্ক নোটিশ প্রদান করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি মাইকিং করানো হবে। সূত্রমতে, এসব বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা আহবান করে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তেমনি নিয়মিত হোম ভিজিট ও প্রয়োজনে গাইড শিক্ষক নিযুক্ত করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিষ্ঠানে যথাসময়ে আগমন এবং প্রস্থান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতপূর্বক অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তাদের বাড়িতে খোঁজ নিতে হবে। পাশাপাশি শ্রেনীকক্ষে শিক্ষকবৃন্দকে মোবাইলে কথা বলা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
স্বাক্ষরিত ওই স্মারকে আরো উল্লেখ করা হয়েছে-শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তি এবং ঝরে পড়ারোধে মাদক ও বাল্যবিবাহ বিরোধী কমিটি গঠণ করতে হবে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ কর্মচারীগণকে ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় মনোযোগ বৃদ্ধিসহ পাঠ্যক্রম বহির্ভুত বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে বিজ্ঞান ক্লাব, ইংরেজি ক্লাব ও ডিবেট ক্লাব প্রতিষ্ঠাসহ স্কাউটিং কার্যক্রমকে বেগবান করতে হবে। এছাড়াও প্রতিমাসে কিংবা দুইমাস পর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং ও বাল্য বিবাহ বিরোধী সচেতনতামূলক সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে সামাজিক অসঙ্গতি দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে এসব শর্তাবলী মেনে চলার শর্তে সমঝোতা স্মারকে প্রথম পক্ষ হিসেবে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে উপজেলার ৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২২টি মাদরাসার সুপারগণ স্বাক্ষর করেছেন।