
এইচ এম নাসির উদ্দিন, খুলনা।। সনাতন ধর্মলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসব বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হলো। সারা হিন্দু বাঙালি সমাজের প্রাণের উৎসব শারদীয়া দুর্গোৎসব শুরু হয় মহালয়ার মাধ্যমে এবং তা শেষ হয় বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে।
শারদীয় দুর্গোৎসব এই অনুষ্ঠানটি শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার নয়। এটা আবেগ, ঐতিহ্য ও সামাজিক সংহতির এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র। মহালয়ার দিন থেকেই দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। ঐদিন ভোরবেলা মহালয়ার চণ্ডীপাঠ বাঙালির ঘরে ঘরে ধ্বনিত হয়।
পূজা শুরুর দিনেই দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানো হয় অসুরদের বিনাশের জন্য। মহালয়া থেকে শুরু হয় দেবীপক্ষ।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের সূচনা নির্দেশ করে। দুর্গাপূজা:আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দের দিনগুলি মহালয়ার পরে আসে ষষ্ঠী, যার মাধ্যমে প্রতিমা উন্মোচনের মাধ্যমে শুরু হয় মূল পূজার পর্ব।
পর্যায়ক্রমে একে একে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী প্রতিটি দিনই একেকটি বিশেষ আচার ও ধর্মীয় মাহাত্ম্য বহন করে। অষ্টমীর দিন কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নবমীতে হয় মহানবমী পূজা ও হোম। বিজয়া দশমী: বিদায় ও শুভেচ্ছার দিন দশমী তিথিতে দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয়।
দশমী তিথি দিনই মূলত উৎসবের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে। বিজয়া দশমীর দিনে একে অপরকে ‘শুভ বিজয়া’ জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। বরণ, সিঁদুর খেলা, মিষ্টি মুখ সব মিলিয়ে এই দিনেও থাকে এক বিশেষ আনন্দ ও আবেগ। সমাপ্তি নয়, অপেক্ষার সূচনা বিজয়ার সাথে সঙ্গেই শুরু হয় আবার এক বছরের অপেক্ষা। “আসছে বছর আবার হবে” এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিদায় জানানো হয় দুর্গা মাকে।
২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ।
দুর্গাপূজাকে প্রানবন্ত ও আকর্ষণীয় করতে বিভিন্ন পুজা মন্ডপ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ধর্মীয় ও মাঙ্গলিক এবং বর্ণাঢ্য অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছিল।
ব্যাপক আয়োজন ও আনন্দ উৎসবের মধ্যে চোখে পড়ার মত ছিল এবার, খুলনা ও যশোর জেলার মধ্যবর্তী স্থান, ভৈরব নদীর অগ্রভাগে খুলনার ফুলতলা উপজেলার এবং যশোরের অভয়নগর উপজেলার মিলনস্থল “শিকীরহাট “খেয়াঘাটে বর্তমানে ফেরিঘাট। খুলনা মহানগরীর জেলখানা ঘাট, বাগেরহাটের ফকিরহাটের কেন্দ্রীয় কালী মন্দির পূজা মন্ডপ একই উপজেলার বেতাগ, লখপুর বাজার, জাড়িয়া নাথপাড়া, দামবাড়ী, দত্ত বাড়ি চুলকাঠি, ফল তিতা, মোমতলা, নারায়ণপুর গোপালের বাড়ি, আমিরপুর বাজার, সহ ভবনা দাস পাড়া ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ।
শারদীয় এ অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো দেবীর আবির্ভাব-কে ঘিরে ধর্মীয় আলোচনা,প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় পুজো ও আরতী, শঙ্খধ্বনি প্রতিযোগিতা, উলুধ্বনি প্রতিযোগিতা, মোমবাতি প্রজ্বলন,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য পরিবেশন, ম্যাজিক ,সামাজিক ও ধর্মীয় গান, আরতি প্রতিযোগিতা, মিথ্যা অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ।
সকল পূজা মন্ডপে, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের পদচারণা। সামাজিক ও আর্থিক সহযোগিতা। উল্লেখ্য প্রশাসনিক ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির ছিল কড়া নজরদারি। কোথায়ও উল্লেখযোগ্য বিশৃঙ্খলার কোন ঘটনা শোনা যায় নাই।
দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে-আইন শৃঙ্খলার যে অবনতি চলছে, সনাতন ধর্মালম্বী কয়েকজন গুণীজন ও সুধীজন এর মন্তব্য মহা মায়ার এ আশীর্বাদে দেশের অশান্তি ও খুন-খারাবি কমে যাবে।

