মানিক ঘোষ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ।। সাধারণ এক সন্ধ্যা ছিল ঝিনাইদহের গোয়ালপাড়া বাজারে। ভ্যানে ঝাল-মুড়ি বিক্রি শেষ করে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পিতা জাহাঙ্গীর হোসেন ও তার তরুণ ছেলে ইজাজুল। কিন্তু সেই স্বাভাবিক সন্ধ্যা মুহূর্তেই রূপ নিল রক্তাক্ত বিভীষিকায়—একটি তুচ্ছ ঘটনাই কেড়ে নিল শান্তি, নেমে এল আতঙ্ক।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাত প্রায় ৮টার দিকে ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোয়ালপাড়া বাজারের ডাব বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) এবং তার ছেলে ইজাজুল হোসেন (২২) ভ্যানে করে বাজারে ঝাল-মুড়ি বিক্রি করছিলেন। বিক্রি শেষে যখন তারা বাড়ি ফিরতে প্রস্তুত, তখন স্থানীয় যুবক শিমুল, আব্দুর রহিমের ছেলে, প্রস্তাব দেয় তাদের ভ্যানে করে অন্যত্র যাওয়ার।
কিন্তু জাহাঙ্গীর হোসেন বিনয়ের সঙ্গে বলেন,“ আযান হয়েছে, নামাজ পড়ে বাড়ি যাব, এখন যেতে পারবো না।”
এই সামান্য কথাতেই ক্রোধে ফেটে পড়ে শিমুল।
হঠাৎ দা হাতে নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন পিতা–পুত্রের ওপর। মুহূর্তের মধ্যে চারপাশ ভরে যায় চিৎকার ও রক্তের স্রোতে।
স্থানীয়রা ছুটে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চিকিৎসকরা জানান, দু’জনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গোয়ালপাড়া বাজারে এখনো আতঙ্কের ছায়া। দোকানপাটে আলো জ্বলছে, কিন্তু মানুষের মুখে শোক ও ক্ষোভ।
বাজারের এক দোকানি বলেন,“ জাহাঙ্গীর ভাই শান্ত-ভদ্র মানুষ। তুচ্ছ কারণে এমন হামলা হবে, ভাবতেই পারছি না।”এদিকে হামলাকারী শিমুল পলাতক।
তাকে ধরতে ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে, জানিয়েছেন ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ঘটনার পর বাজিতপুর গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এক প্রতিবেশী বলেন,
“দিনমজুরের পরিবারটা সব সময় পরিশ্রম করে খায়। এখন দু’জনই হাসপাতালে—কে দেখবে তাদের?”
এই নির্মম ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে—
একটি সামান্য কথার ভুল বোঝাবুঝি কি মানুষের মধ্যে এতটা হিংসা জাগাতে পারে?
প্রবীণ জাহাঙ্গীরের রক্তে রঞ্জিত সেই বাজার যেন আমাদের সমাজের অসহিষ্ণুতার এক প্রতিচ্ছবি।


