
ফরিদা পারভিন, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)।। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচাবাজারগুলো বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ পলিথিনের দখলে। ২০০২ সাল থেকে আইন করে পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ হলেও, শৈলকুপায় যেন সেই আইন কার্যত মৃত। স্থানীয় প্রশাসনের চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে চলছে এই পরিবেশ বিধ্বংসী পণ্যের রমরমা ব্যবসা।
দীর্ঘ দিন ধরে পলিথিন আমদানি ও বিক্রির লাগাম টেনে ধরার ন্যূনতম উদ্যোগও নেই স্থানীয় প্রশাসনের। এর মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাসের ‘অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা’। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ইউএনও দপ্তর, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দপ্তর এবং পৌরসভার মেয়রের দপ্তরের মতো তিনটি গুরুদায়িত্ব সামলাচ্ছেন। একজন কর্মকর্তার পক্ষে একসঙ্গে এতগুলো দপ্তরের কাজ সঠিকভাবে পালন করা যে অসম্ভব, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। ফলস্বরূপ, নিয়মিত দাপ্তরিক কাজ সামলানোর পর পরিবেশ রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করা তাঁর জন্য ‘দূরূহ’ হয়ে পড়েছে। আর এই ‘দূরূহতা’র কারণেই বন্ধ রয়েছে পলিথিনবিরোধী সকল অভিযান।
প্রশাসনের এই কার্যত ‘অন্ধ’ ভূমিকার সুযোগ নিয়ে উপজেলার ছোট-বড় কাঁচাবাজার ও গ্রোথ সেন্টারের দুই সহস্রাধিক দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। চাল, ডাল, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য প্যাকেটজাত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে এই বিষাক্ত ব্যাগ।
ব্যবহার শেষে এই অব্যবহৃত পলিথিনের স্তূপ প্রতিদিন পরিবেশের সর্বনাশ করছে। ড্রেন, নালা-নর্দমা বন্ধ করে সৃষ্টি করছে জলাবদ্ধতা। সবচেয়ে ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে আবাদী জমিতে, যেখানে মাটিতে মিশে মাটির গুণগত মান ও উর্বরতা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট করছে এই পলিথিন। এর ফলে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা শৈলকুপার খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য সরাসরি হুমকি স্বরূপ।
আইন প্রয়োগে ব্যর্থতার দায়ভার কার? বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধন-২০০২) অনুযায়ী, নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাতকরণের শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। অথচ শৈলকুপায় এই আইনের প্রয়োগ সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এলাকার সচেতন মহল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, অতিরিক্ত দায়িত্বের অজুহাত দেখিয়ে পরিবেশ সুরক্ষার মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক জরুরি ভিত্তিতে নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি রোধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায়, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার জেরে শৈলকুপার মাটি ও জনস্বাস্থ্য এক মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাবে।