
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসায় কালোজিরার ব্যবহার বহু পুরনো। ‘নাইজেলা সাটিভা’ (Nigella Sativa) নামের এই ছোট কালো বীজটি শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, শরীর ও ত্বকের জন্যও উপকারে ভরপুর। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন থেকে শুরু করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি প্রায় ৩৭টি ক্ষেত্রে কালোজিরার উপকারিতা প্রমাণিত।
শরীরের জন্য কালোজিরার উপকারিতা:
.স্মরণশক্তি বৃদ্ধি: পুদিনা বা কমলার রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, দুশ্চিন্তা কমায়।
.মাথাব্যথা ও সর্দি-কাশি: মাথায় তেল মালিশ ও মধুসহ সেবনে দ্রুত আরাম মেলে।
.বাত ও চর্মরোগ: হলুদের রসের সঙ্গে কালোজিরা তেল ব্যবহার কার্যকর।
.হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ: নিয়মিত সেবনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদযন্ত্র শক্তিশালী হয়।
.ডায়াবেটিস: খালি পেটে এক চিমটি কালোজিরা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
.শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি: দুধ বা রং চায়ের সঙ্গে কালোজিরা তেল মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
.যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি: নিয়মিত সেবনে নারী-পুরুষ উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ে।
.লিভার ও কিডনির সুরক্ষা: কালোজিরা লিভারের বিষক্রিয়া নাশ করে এবং কিডনির পাথর প্রতিরোধে সহায়ক।
.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: প্রতিদিন এক চামচ মধুর সঙ্গে কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে।
.অর্শ রোগ নিরাময়ে: এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তেল চুরন/তিলের তেল, এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সহ প্রতিদিন খালি পেটে ৩/৪ সপ্তাহ সেবন করা।
.জৈব শক্তি বৃদ্ধির জন্য: কালোজিরা নারী- পুরুষ উভয়ের যৌনক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারে সাথে খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে যে, কালিজিরা যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। একচা-চামচ মাখন, এক চা-চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরার তেল ও মধুসহ দৈনিক ৩বার ৪/৫ সপ্তাহ সেবন করুন। তবে পুরানো কালোজিরা তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
.অনিয়মিত মাসিক/স্রাব রোগের ক্ষেত্রে: এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে নিয়মিত সেবন করুন। যা শতভাগ কার্যকরী ।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে: ত্বকের গঠনের উন্নতি ও ত্বকের প্রভা বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা অত্যাবশ্যকীয়। এতে লিনোলেইক ও লিনোলেনিক নামের এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড থাকে যা পরিবেশের প্রখরতা, স্ট্রেস ইত্যাদি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে এবং ত্বককে সুন্দর করে ও ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।
.মধু ও কালোজিরার পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগিয়ে আধাঘন্টা বা একঘন্টা রাখে ধুয়ে ফেলুন, এতে ত্বক উজ্জ্বল হবে। যদি আপনার ব্রণের সমস্যা থাকে তাহলে আপেল সাইডার ভিনেগারের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। নিয়মিত লাগালে ব্রণ দূর হবে।
.শুষ্ক ত্বকের জন্য কালোজিরার গুঁড়া ও কালোজিরার তেলের সাথে তিলের তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখতে পাবেন।দুগ্ধ দানকারি মা’দের দুধ বৃদ্ধির জন্য : যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালোজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। এছাড়া একচা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দৈনিক ৩বার করে নিয়মিত সেবন করুন। যা শতভাগ কার্যকরী।
.গ্যাষ্ট্রীক বা আমাশয় নিরাময়ে: এক চা-চামচ তেলসমপরিমাণ মধু সহ দিনে ৩বার করে ২/৩ সপ্তাহ সেবন করুন।
.জন্ডিস বা লিভারের বিভিন্ন সমস্যার দুর করতে: একগ্লাস ত্রিপলার শরবতের সাথে এক চা-চামচ কালোজিরার তেল দিনে ৩বার করে ৪/৫ সপ্তাহ সেবন করুন।
.পিঠেব্যাথা দুর করার জন্য: কালোজিরার থেকে যে তেল বের করা হয় তা আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘমেয়াদী রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা কমাতে বেশ সাহায্য করে। এছাড়াও সাধারণভাবে কালোজিরা খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
.শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে: দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করে কালোজিরা। দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়। তবে বাহ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে।
.স্বাস্থ্য ভাল রাখতে: মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
.হজমের সমস্যা: হজমের সমস্যায় এক-দুই চা-চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে খেতে থাকুন। এভাবে প্রতিদিন দু-তিনবার খেলে এক মাসের মধ্যে হজমশক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পেট ফাঁপাভাবও দূর হবে।
.লিভার সুরক্ষায়: লিভারের সুরক্ষায় কালোজিরার ভেষজটি অনন্য। লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে ।
.চুল পড়া বন্ধ করতে: কালোজিরার খেয়ে যান, চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে। আরো ফল পেতে চুলের গোড়ায় এর তেল মালিশ করতে থাকুন।
.দেহের উন্নতি: নিয়মিত কালোজিরা সেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। এছাড়া অরুচি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, জ্বর, শরীর ব্যথা, গলা ও দাতে ব্যথা, পুরাতন মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, খোসপঁচড়া, শ্বেতি, দাদ, একজিমা, সর্দি, কাশি, হাঁপানিতেও কালোজিরা অব্যর্থ ঔষধ হিসেবে কাজ করে।এটি মূত্র বর্ধক ও উচ্চরক্তচাপ হ্রাসকারক,গ্যাসট্রিক, আলসার প্রতিরোধক, ভাইরাস প্রতিরোধক, টিউমার এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক, ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমিনাষক, রক্তের রক্ষাকারক, যকৃতের বিষক্রিয়ানাষক, এলার্জি প্রতিরোধক, বাতব্যথা নাশক। অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ও দাঁতের ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, সর্দি, কাশি, হাঁপানি নিরাময়ে কালোজিরা সহায়তা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালোজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরা উপযোগী।
.জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দুর করার জন্য কালোজিরা যথেষ্ট উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায় এবং দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে। এছাড়া শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ (ছোঁয়াচে রোগ) হয় না। তিলের তেলের সঙ্গে কালোজিরা বাঁটা বা কালোজিরার তেল মিশিয়ে ফোড়াতে লাগালে ফোড়ার উপশম হয়।
.দাঁত ব্যথা নিরাময়ে: দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে।
.ঘুমের প্রয়োজনে: তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিপূর্ণ নিদ্রা হয়।
.রোগ প্রতিরোধ করতে: কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। এতে করে যে কোন জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বস্থ্যের উন্নতি করে। ১ চামচ কালোজিরা অথবা কয়েক ফোটা কালোজিরার তেল ও ১ চামচ মধুসহ প্রতিদিন সেবন করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
.পারকিনসন্স রোগের প্রতিকারে: কালোজিরায় থাইমোকুইনিন থাকে যা পারকিনসন্স ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের দেহে উৎপন্ন টক্সিনের প্রভাব থেকে নিউরনের সুরক্ষায় কাজ করে।
.চুল বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে: কালোজিরার তেল চুলের কোষ ও ফলিকলকে চাঙ্গা করে ও শক্তিশালী করে যার ফলে নতুন চুল সৃষ্টি হয়। এছাড়াও কালোজিরার তেল চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুল পড়া কমায়।
.কিডনির পাথর: ২৫০ গ্রাম কালোজিরা ও সমপরিমাণ বিশুদ্ধ মধুর সাথে কালোজিরা উত্তমরূপে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রণ আধাকাপ গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধাকাপ তেল সহ পান করতে হবে। কালোজিরার টীংচার মধুসহ দিনে ৩/৪ বার ১৫ ফোটা সেবন করতে পারেন।
.জ্বর: সকাল-সন্ধ্যায় লেবুর রসের সাথে ১ চামচ কালোজিরা তেল পান করুন আর কালোজিরার নস্যি গ্রহন করুন। কালোজিরা ও লেবুর টীংচার (অ্যাসেটিকঅ্যাসিড) সংমিশ্রন করে দেয়া যেতে পারে।
.স্নায়ুবিক উত্তেজনা: কফির সাথে কালোজিরা সেবনে দূরীভূত হয়।
. উরুসদ্ধি প্রদাহ: স্থানটি ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়ে ৩ দিন সন্ধ্যায় আক্রান্ত স্থানে কালোজিরা তেল লাগান এবং পর দিন সকালে ধুয়ে নিন।
.আঁচিল: হেলেঞ্চা দিয়ে ঘষে কালোজিরা তেল লাগান। হেলেঞ্চা মুল আরক মিশিয়ে নিলেও হবে। সাথে খেতে দিন হোমিও ওষুধ
সকাল রোগের প্রতিষেধক: মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।

