
এলিসন সুঙ, মৌলভীবাজার।।মরণ সাগর পাড়ে তোমরা অমর, তোমাদের স্মরি।নিখিলে রচিয়া গেলে আপনার ঘর, তোমাদের স্মরি” এই রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশনা মধ্যদিয়ে মলিন হৃদয়ের সুরে সুরে ভেসেছে দুই শতাব্দী পুর্বের করব স্থান খেজুরীছড়াতে।
গোধূলিলগ্নে মোমবাতি জালিয়ে আলোয় আলোকিত হয় কবরস্থানগুলো আর আগরবাতি সুগন্ধে হয় সুভাষিত। সারিবদ্ধ কবরের পাশে বসে ভারাক্রান্ত মনে তাকিয়ে রয়েছেন কিশোর কিশোর যুবক যুবতী ও বয়স্ক খ্রিস্ট ভক্তরা। তারা ভক্তি ভরামনে পরলোকগত ভক্তদের আত্মা কল্যাণে প্রার্থনা করছেন পরম পিতার কাছে।
প্রতিবছর ২রা নভেম্বর “অল সোলস ডে”(All Souls’ Day) খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় উৎসব।
এই দিনে খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের জন্য ছিলো একটি বিশেষ দিন। পরলোকগত প্রিয়জনদের আত্মা কল্যাণে এদিন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা কবরে গিয়ে প্রার্থনা করেন। ফুল দিয়ে প্রিয়জনদের কবর সাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে সকলে তাদের প্রিয়জনদের আত্মার কল্যাণ ও স্বর্গবাসীর জন্য প্রার্থনা করেন। যাদের জন্য প্রার্থনা করার কেউ নেই, তাদের জন্যও উপস্থিত সকলে মিলে প্রার্থনা করেন। শুধু তাই নয়; যারা স্বর্গ-নরকের মধ্যস্থানে রয়েছে তাদের আত্মাও যেন স্বর্গে স্থান পায়, তার জন্যও প্রার্থনা করা হয়।
রোববার বিকেল ৪টায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা অধীনে ঐতিহ্যগত দুই শতাব্দী পুর্বে বৃটিশ কবরস্থান খেজুরিছড়ায় বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।এই প্রার্থনা সভায় পরিচালনা করেন সিলেট কাথলিক ধর্মপ্রদেশর ধর্মপাল বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, ডিডি। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্ট জোসেফ চার্চ শ্রীমঙ্গল মিশনের প্রধান যাজক ড. ফাদার জেমস শ্যামল গমেজ সিএসসি, নটর ডেম স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রপরিচালক ফাদার বিকাশ কজুর সিএসসি প্রমুখ ।
বৈরী আবহাওয়া ফলেও প্রার্থনা সভায় খ্রীস্ট সম্প্রদায়ের সকল বয়সের মানুষেরা উপস্থিতিতে কবরস্থানে ভরপুর ছিলেন। খ্রিস্টযাগ শেষে পবিত্র জলের মাধ্যমে কবরস্থান সূচিস্নাত করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর পরই কবরস্থানে জ্বলে উঠে মোমবাতির আলোকধারা ।
এই প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণকারী মি: সামুয়েল জোসেফ হাজং বলেন,প্রতিবছর কাথলিক খ্রিষ্টান মণ্ডলীতে ২রা নভেম্বর থেকে মাস ব্যাপী পরলোকগত ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। বিশ্বজনীন ক্যাথলিক মন্ডলী সকল পরলাগত ভক্তবৃন্দের আত্মার চিরশান্তি কামনার জন্য প্রতিবছরের ২ নভেম্বর নির্ধারিত করে দিয়েছেন। এদিন সকল মৃতলোকের আত্মার শান্তি কামনার জন্য প্রিয়জনরা বিশেষ প্রার্থনা করেন। তাই এইদিনকে বলা হয় ‘মৃত লোকের পর্ব’এবং পরলোকগত ভক্তদের আত্মার কল্যাণ কামনার দিন। এ মাসে কবর স্থানগুলো পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। পরলোকগত ভক্তদের আত্মা চির শান্তি’তে বিশ্রাম লাভের জন্যে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।এ মাসে যাজক’রা প্রতিটি গ্রাম-শহর-মিশন ও ব্যক্তিগত কবরস্থানে গিয়ে পরলোকগত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন।

