
বিশেষ প্রতিবেদক।। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসে বহিরাগত প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার কঠোর নির্দেশ জারি করা হলেও, সেই নির্দেশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
গত ৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে এনবিআর চেয়ারম্যানের অনুমোদনে মূসক বাস্তবায়ন বিভাগের দ্বিতীয় সচিব মোঃ আব্দুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়—
“কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট, বিভাগীয় সকল দপ্তর ও সার্কেল পর্যায়ে অননুমোদিত বহিরাগতদের প্রবেশ ও অবস্থান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
কোনো অবস্থাতেই বহিরাগতদের অফিসে রাখা যাবে না, এবং এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে হবে।”
তবে সূত্র জানিয়েছে, নির্দেশ জারির এক সপ্তাহ পার হলেও কোনো কাস্টমস ভ্যাট কমিশনারেট দপ্তর বা সার্কেল পর্যায়ে এখনো বহিরাগতদের অপসারণের কার্যকর আদেশ এর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এনবিআরের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ কমিশনার এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনাও আদেশ জারি করেননি।
বহিরাগতদের প্রভাব ও অভিযোগ
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট দপ্তরে অসংখ্য বহিরাগত ব্যক্তি “সহযোগী” বা “কম্পিউটার অপারেটর” পরিচয়ে কাজ করছেন। এদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আত্মীয় বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বিঘ্নে অফিসে প্রবেশ করেন এবং নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘুষ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনিক দুর্বলতা ও অফিস সহকারীদের প্রযুক্তিগত অদক্ষতার সুযোগে এই বহিরাগতরা দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন—
“বহিরাগতদের কারণে অফিসের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্য হচ্ছে, রাজস্ব কার্যক্রমে শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।”
বহিরাগতদের অবস্থান সংক্রান্ত আংশিক তথ্য- নিম্নে প্রদান করা হলো-
ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে বিভিন্ন বিভাগ ও সার্কেলে বেশ কয়েকজন বহিরাগত কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
লালবাগ বিভাগীয় দপ্তরে মোঃ জসিম উদ্দিন,
মতিঝিল ও আরামবাগ সার্কেল: সুকান্ত হালদার, মোঃ সজল মিয়া আরামবাগ সার্কেল,
মোঃ রায়হান নারায়ণগঞ্জ বিভাগ (আলিগঞ্জ সার্কেল)
মোঃ তারেক রামপুরা ও রাজারবাগ সার্কেল:,
মোঃ সোহাগ ফার্মগেট সার্কেল:, মোঃ হিমেল ফার্মগেট সার্কেল,
মোঃ মনির হোসেন কাওরান বাজার সার্কেল:, আবু রায়হান
কাওরানবাজার সার্কেল, মোঃ তেজগাঁও বিভাগীয় দপ্তর, মোঃ রানা তেজগাঁও সার্কেল,
মোঃ রাকিবুল ইসলাম বেগুনবাড়ি সার্কেল:,
এছাড়া পশ্চিম কমিশনারেট ও শান্ত মোহাম্মদপুর বিভাগেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ী মহলের প্রতিক্রিয়া
ব্যবসায়ী মহল দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যে রাজস্ব প্রশাসনে দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার সংকট বাড়ছে।
একজন ব্যবসায়ী বলেন—
“দপ্তরে বহিরাগতরা রাজকীয়ভাবে বসে ঘুষের টাকা লেনদেন করছে। এনবিআরের নতুন আদেশ বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি অনেকটাই কমে আসবে।”
তবে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যাতে এই নির্দেশ কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ না থাকে। একই সঙ্গে দাবি করেছেন— একই স্থানে দীর্ঘদিন কর্মরত সিপাই, সাব-ইন্সপেক্টর ও অফিস সহকারীদের নিয়মিত আঞ্চলিক কমিশনারেট বদলি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দুর্নীতির চক্র ভাঙা যায়।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বহিরাগত উচ্ছেদ অভিযান কার্যকর করতে এনবিআর।

