শীতের আগমনী বার্তা টেনে আনে তাজা মাছের সমাহার।
মোঃ মনিরুজ্জামান চৌধুরী, নড়াগাতী (কালিয়া) থেকে।। নড়াইলের প্রত্যন্ত অঞ্চল নড়াগাতী থানার কলাবাড়িয়া, জয়নগর, খাশিয়াল, মাউলি, বাঐশোনা ও পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের খাল-বিলগুলো শুষ্ক মৌসুমে একেবারে খানা-খন্দরে পরিণত হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় স্থানীয় জলাধারগুলোতে আটকে পড়ছে দেশীয় মাছের ভাণ্ডার। ফলে হাটবাজারে দেখা মিলছে টাটকা দেশীয় মাছের সমাহার—টাকি, পুটি, টেংরা, জিয়েল, কই, বাইলে, শোল, গজার, চেলা ও অন্যান্য প্রজাতি।
শীতের শুরুতে মাছের এই প্রাচুর্য স্থানীয়দের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। তবে জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
খানা-খন্দরে পরিণত জলাধার, মাছ ধরা সহজ, শুকনো মৌসুমে জলাধারগুলোতে পানি কমতে শুরু করলেও এ বছর খাল-বিলের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। কলাবাড়িয়া, জয়নগর, খাশিয়াল, মাউলি, বাঐশোনা ও পহরডাঙ্গার খাল-বিলগুলো এখন ঝরঝরে খানা-খন্দরে পরিণত। পানি কমে যাওয়ায় মাছ সহজেই জাল ও দোহাড়ের ফাঁদে ধরা পড়ছে।
স্থানীয় জেলে বশির মোল্লা বলেন, “পানি নেই বললেই চলে। যে খালে বর্ষায় অনেক পানি হয় সেখানে এখন হাঁটার পথ। মাছগুলো ছোট ছোট গর্তে আটকে পড়ে—ধরতে সুবিধা হয়।”
এ অবস্থায় জেলেদের ধরা মাছগুলো বাজারে সরাসরি বিক্রি করা হয়। মাছ ধরার কাজে ঝুঁকি কমে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে জলাশয় ও মাছের প্রজননের জন্য এটি চিন্তার বিষয়।
নড়াগাতীর বিভিন্ন বাজার—খাসিয়াল বাজার, জয়নগর বাজার, পুঠিমারি বাজার, কলাবাড়িয়া বাজার, মাউলি বাজার, বড়দিয়া বাজার, মহাজন বাজার, যোগানীয়া বাজার, বাগুডাঙ্গা বাজার, পহরডাঙ্গা বাজার—এসময় মিলছে দেশীয় মাছের তাজা সরবরাহ।
বাজারে পাওয়া যাচ্ছে: টাকি, পুটি, টেংরা, জিয়েল,কই, বাইলে, শোল, গজার, চেলা মাঝে মাঝে মেণি, মাগুর, আইড়, বোয়াল মাছের মধ্যে বিশেষ করে কই, শোল ও গজারের দাম তুলনামূলক বেশি হলেও টাটকা হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।
পহরডাঙ্গা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আলমগীর জানান, “এ সময়টা দেশীয় মাছের সবচেয়ে ভালো সময়। নদী-খাল শুকিয়ে গেলে মাছ পাওয়া যায় বেশি। তাই দামও খুব বেশি নয়। মানুষ খুশি মনে কিনে নিয়ে যায়।”
ক্রেতাদের উৎসাহ থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে জলাধারের শুকিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ সচেতনরা। স্থানীয় কৃষক কবির সরদার বলেন, “মাছ ধরতে সুবিধা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু প্রতি বছর এভাবে খাল-বিল শুকিয়ে গেলে ভবিষ্যতে মাছের উৎপাদন কমে যাবে। আমাদের পরিবেশেও এর প্রভাব পড়বে।”
কালিয়া মৎস অফিসার আবু রায়হান জানান, খাল পুনঃখনন, বাঁধ মেরামত ও জলাধার সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগ বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে বর্তমানে যে মাছের উৎসব দেখা যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতে কমে যেতে পারে।
শীতের আগমনী কুয়াশা কাটতেই নড়াগাতীর হাটবাজারে দেখা যাচ্ছে ব্যস্ততা। সকালে বাজারে এসে ক্রেতারা মাছ কিনে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন।
যোগানীয়া বাজারের গৃহিণী সুমি বেগম বলেন, “এখন যেই মাছ কিনি, সবই টাটকা। গ্রামের মাছের স্বাদই আলাদা।”
শীতের শুরুতে এভাবে দেশীয় মাছের প্রচুরতা স্থানীয়দের জন্য এক ধরনের আনন্দ ও উপার্জনের উৎস।


