
মোঃ মনিরুজ্জামান চৌধুরী, কালিয়া, নড়াইল।। একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও চারণকবি বিজয় সরকারের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (৪ ডিসেম্বর)। হৃদয়ছোঁয়া সুর ও গানের মাধুর্যে সাধারণ মানুষের জীবনবোধ, প্রেম, আধ্যাত্মিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে অমর হয়ে আছেন তিনি।
তিনি গেয়েছেন—
“যেমন আছে এই পৃথিবী / তেমনিই ঠিক রবে
সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে…”
ঠিক তেমনি আজ থেকে ৪০ বছর আগে ১৯৮৫ সালের এই দিনে মায়ার পৃথিবী ছেড়ে পরলোকগমন করেন লোকগানের এই মহারথী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। তার দুই ছেলে কাজল ও বাদল অধিকারী বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন।
১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বিজয় সরকার। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী। সুরের জাদু, গানের নেশা এবং লোকসংগীতে তন্ময়তায় তিনি ‘পাগল বিজয়’ নামে খ্যাতি অর্জন করেন। গীতিকার, সুরকার ও গায়ক—একাধারে তিন পরিচয়ে তিনি বাংলা লোকসংগীতকে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতা। জীবদ্দশায় ১,৮০০-রও বেশি গান লিখেছেন ও সুর করেছেন তিনি।
স্ত্রী বীণাপাণির মৃত্যুসংবাদ গানের আসরেই তিনি গেয়েছিলেন—
“পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী… একদিন ভাবি নাই মনে…”
মানবিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত তার গান—
“নবী নামের নৌকা গড় / আল্লাহ নামের পাল খাটাও…”
“আল্লাহ রসূল বল মোমিন / এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা…”
গ্রামবাংলার প্রেম-অভিমানও পেয়েছে শব্দ ও সুরের নতুন ব্যাখ্যা—
“নক্সী কাঁথার মাঠেরে / সাজুর ব্যথায় আজো রে বাজে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি…”
লোকসংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয় তাকে।
এদিকে, বিজয় সরকারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার নড়াইলে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে বিজয়গীতি প্রতিযোগিতা, বিকেল ৩টায় আবৃত্তি, উন্মুক্ত বিজয়গীতি পরিবেশন, কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এসব আয়োজন করছে জেলা প্রশাসন ও চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন।
বাংলার লোকগানের আকাশে চির আলোকিত একটি নাম—বিজয় সরকার। গানেই তিনি বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ, স্মৃতির পাতায়, মানুষের ভালোবাসায়—“চলে যাওয়ার পরেও…”।

