
★ নড়াইলের নড়াগাতীতে হাই-ভোল্টেজ সাউন্ডে বিপর্যস্ত জনজীবনম।
মোঃ মনিরুজ্জামান চৌধুরী, কালিয়া, নড়াইল।। দেশের বড় শহরগুলোতে শব্দদূষণ দীর্ঘদিনের পরিচিত সমস্যা হলেও বর্তমানে গ্রামবাংলাতেও এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী এলাকার কলাবাড়িয়া, জয়নগর, মাউলী, বাঐশোনা, খাশিয়াল, পহরডাঙ্গা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে শব্দদূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
বিশেষ করে বিয়ে, জন্মদিন ও বিভিন্ন সামাজিক আনন্দ-অনুষ্ঠানে হাই-ভোল্টেজ সাউন্ড সিস্টেম ও ডিস্কো লাইট ব্যবহারের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। অতিরিক্ত শব্দে আশপাশের বাড়িঘরের দেয়াল কেঁপে ওঠে, এমনকি মাটিও কাঁপতে থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
রাতভর উচ্চ শব্দে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ, শিশু, অসুস্থ রোগী, গর্ভবতী নারী ও শিক্ষার্থীরা। অনেকেরই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে, রক্তচাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানসিক অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
স্থানীয় চিকিৎসক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, ধারাবাহিক শব্দদূষণের ফলে শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগ ব্যাহত হচ্ছে, বয়স্কদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে এবং রোগীদের শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হচ্ছে। তিনি বলেন, “একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, উচ্চ শব্দের কারণে হৃদরোগীরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
আরেক চিকিৎসক ডা. ফারিয়া জামান বলেন, “হাই-ভোল্টেজ সাউন্ড সিস্টেম ও ডিস্কো লাইট শিশুদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি ধীরে ধীরে একটি পুরো প্রজন্মকে শারীরিক ও মানসিক বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
বাংলাদেশের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা–২০০৬ অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় ৬০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ নিষিদ্ধ এবং রাত ৯টার পর উচ্চ শব্দে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে বাস্তবে এসব বিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয় প্রশাসনে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া হলেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে।
অভিভাবক মো. কমর সিকদার বলেন, “পড়াশোনা তো দূরের কথা, আমাদের শিশুরা ঠিকমতো ঘুমাতেও পারে না। শব্দ কমাতে বললে অনুষ্ঠান আয়োজকরাই উল্টো ঝামেলা করে।”
শিক্ষক খান মাহবুব আলী বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে গ্রামের মানুষ বার্ধক্যে পৌঁছানোর আগেই শ্রবণশক্তি হারাবে। বাড়বে হৃদরোগ ও মানসিক রোগের ঝুঁকি—যা হবে অপূরণীয় ক্ষতি।”
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিন্নাতুল ইসলাম বলেন, “শব্দদূষণ মানুষের জন্য নীরব ঘাতকের মতো। জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
নড়াগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, “আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। শব্দদূষণ বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
এলাকাবাসীর দাবি, বিনোদনের নামে অন্যের শান্তি ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করা মানবতার পরিপন্থী। শব্দদূষণ রোধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার পাশাপাশি নাগরিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।
