
★ বারইপাড়া সেতু নিয়ে চরম ভোগান্তিতে কালিয়াবাসী।
মনিরুজ্জামান চৌধুরী, কালিয়া (নড়াইল)।। নকশা জটিলতা ও দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে নড়াইলের কালিয়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ‘বারইপাড়া সেতু’র ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটির কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার এই সেতুর প্রাথমিক চুক্তিমূল্য ছিল ৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু নকশা পরিবর্তন ও সময়সীমা বারবার বাড়ানোর ফলে বর্তমানে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি ৯২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
নড়াইল সদরসহ কালিয়া উপজেলা ও আশপাশের অন্তত তিনটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে ২০১৮ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে নদীর দুই তীরের সংযোগ সড়কসহ ১১টি পায়ার ও ১১টি স্প্যানের কাজ শেষ হলেও মাঝনদীর ৩টি পিলার ও ৩টি স্টিল স্প্যানের কাজ এখনো বাকি রয়েছে।
দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এলাকায় শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জরুরি পরিস্থিতিতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কিংবা অ্যাম্বুলেন্স সময়মতো পৌঁছাতে পারে না। খেয়াঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় সাধারণ মানুষকে।
বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা জিলহজ খান বলেন, “প্রায় ৮ বছর ধরে সেতুর কাজ চলছে, কিন্তু শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হতে হয়।”
মাধবপাশা গ্রামের ডা. অসীম কুমার অধিকারী বলেন, “বারইপাড়া সেতু আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। কিন্তু এত বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় সেই স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।”
জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল অ্যান্ড মঈনুদ্দিন বাঁশি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ৬৫ কোটি টাকায় কাজ শুরু করে। বাল্কহেডের ধাক্কায় ৯ নম্বর পিলার দুইবার নদীগর্ভে বিলীন হলে মূল অংশের ৪টি পায়ার ও ৩টি স্প্যান অসম্পূর্ণ রেখেই প্রায় ৬১ কোটি টাকা উত্তোলন করে কাজ শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে দ্বিতীয় দফায় কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজিস্ট লিমিটেড অবশিষ্ট কাজের দায়িত্ব পায়।
বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ খান লিটন জানান, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ৮৬ দশমিক ৭৩ মিটার স্টিল আর্চ স্প্যানসহ বাকি স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঝনদীর আর্চ স্প্যান বসিয়ে সেতুটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে আশাবাদী।”
নড়াইল জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নকশার ত্রুটি সংশোধন করে নতুন উদ্যমে কাজ চলছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যেই সেতুর নির্মাণ শেষ করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

