বরিশাল অফিস :- ঘূর্ণিঝড় আমফানে বরিশাল বিভাগে বেশ কিছু কাঁচা ঘর-বাড়ি, গাছপালা, ফসল, বিদ্যুৎ, রাস্তা ও মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে বিভাগে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলমান রয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী জানান, বিভাগে ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৩ জন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলো। এছাড়া ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৪টি গবাদি পশু আশ্রয় নেয়। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে কয়েকটিস্থানে বিদ্যুতের পোষ্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় টানা ১৬ ঘন্টা বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বেশ কিছুস্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝড়ো বাতাস শুরুর পর বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিভাগের পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া কলেজের পেছনে নিজ ঘরের পাকা দেয়ালের নিচে চাঁপা পরে মজিবুর রহমান (৫৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিব উদ্দিন জানান, মেহেন্দিগঞ্জ থানার দরির চর খাজুরিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইমন (১৬) নামের এক কিশোর বুধবার বিকেলে নদীতে গোসল করতে নামে। এসময় ঝড়ো বাতাসের কবলে পরে সে ডুবে যায়। রাত ১০ ঘটার দিকে তার লাশ নদীতে ভেসে উঠে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে সাইক্লোন শেল্টারে লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে প্রচারণা কাজ চালাতে গিয়ে বুধবার সকালে নৌকা ডুবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের সিপিপির টিম লিডার মোঃ শাহ আলম মারা গেছেন।
অন্যদিকে গলাচিপার পানপট্টি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের খরিদা গ্রামে ঘূর্ণিঝড় আমফানে মোঃ রাশেদ নামের এক ব্যক্তি বুধবার সন্ধ্যায় আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার সময় গাছের ডাল ভেঙে পরে মারা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী।
অপরদিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মানিকা ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া গ্রামের সিদ্দিক ফকির (৭০) বাড়ির পাশে গাছের নিচে চাঁপা পরে মারা গেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন। এর আগে বুধবার সকালে চট্টগ্রামে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা রফিকুল ইসলাম (৩৫) ভোলার উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে লক্ষিপুরের মজুচৌধুরীর ঘাট থেকে ট্রলারযোগে ভোলার ইলিশা ঘাটে আসার পথে মেঘনায় ট্রলার উল্টে সে মারা যায়। নিহত হন তিনি। লকডাউন অমান্য করার কারণে পরিবারের লোকজন তার মৃত্যুর ঘটনা শুরুতে গোপন রাখেন। বোরহানউদ্দিন থাকার ওসি এনামুল হক জানান, নিহতের লাশ বিকালে তার বাড়ি হাসান নগর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে আনার পর পুলিশ ঘটনাটি জানতে পারে।
এছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার পরীরখান বাজার এলাকার জোয়ারের পানিতে ডুবে মোঃ শহিদ উদ্দিন (৬০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ের আগেই আবাদকৃত বোরো ধানের ৯০ শতাংশ ধান ঘরে তোলায় ধানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলার গৌরনদী, বানারীপাড়া ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় দুই হাজার আটশ’ হেক্টর জমির পান বরজ ও নয়শ’ হেক্টর জমির কলা ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলার অধিকাংশ উপজেলার বসত ঘরের টিনের চাল, গাছ-পালা উপর পরেছে। প্লাবিত হওয়ায় পুকুর ও ঘেরের মাছ ও ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।