খোকন আহম্মেদ হীরা, কাঠালিয়া থেকে ফিরে :- ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে নিশ্চিহ্ন বিশখালী নদীর তীরবর্তী এলাকার হাজারো পরিবারের ঈদ কেটেছে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যদিয়ে। বিশখালীর ভয়াবহ ভাঙন ও তীর রক্ষা বাঁধ ধ্বসে যাওয়ায় ভিটে-মাটি হারানোর আশঙ্কায় তাদের মাঝে এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমফানের আঘাতে ভেঙে গেছে বিশখালীর তীরবর্তী বৃহত্তর বরিশালের কাঠালিয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এরমধ্যে কাঠালিয়া লঞ্চঘাট এলাকা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিত্বে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ পুনর্র্নিমাণ ও নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা না করায় আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন ওই উপজেলার আমুয়া, কাঠলিয়া সদর, শৌলজালিয়া ও আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
বুধবার (২৭ মে) বিকেলে দেখা গেছে, একদিকে নদীভাঙন অপরদিকে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি হু হু করে ভেতরে প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন ওই চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মহামারি করোনার মধ্যে অতিসম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আমফানের ছোবলে নদীর তীরবর্তী মানুষের জন্য অনেকটাই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিডর, আইলা, ফণী ও বুলবুলের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধের প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সবশেষ ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িঁবাধ। অব্যাহত নদীভাঙন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা থাকায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে বর্তমানে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। যেকারণে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বাসিন্দারা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, গত পাঁচ বছরে তীর রক্ষা বাঁধে কমপক্ষে আট থেকে দশবার ধ্বস নামে। সে সময় সংস্কারে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকানো না গেলে পুরো বাঁধ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সূত্রে আরও জানা গেছে, পুরো বাঁধ ভেঙে গেলে অরক্ষিত হয়ে পরবে গোটা কাঠালিয়া উপজেলা। হুমকিতে পরবে উপজেলা কমপ্লেক্সসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমাদুল হক মনির বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিত্বে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা না গেলে উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলী জমি ও সরকারি অফিস-আদালত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থায়ীভাবে ভাঙ্গনরোধের জন্য আমুয়া ইউনিয়ন থেকে আওরাবুনিয়া পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলাকায় বøক দিয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য তিনি জোর দাবি করেন।
সবশেষ আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ কাঠালিয়ার বিশখালীর তীরবর্তী নিশ্চিহ্ন বেড়িঁবাধ ও নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক জোহর আলী জনকণ্ঠকে বলেন, কাঠালিয়াকে আর ভাঙতে দেওয়া যাবেনা, ভাঙন থেকে রক্ষা করা হবে। এ জন্য দ্রæত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া নদীর তীর রক্ষায় ২৬ কিলোমিটার কাজ বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সময় ধরে বিশখালী নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়কেন্দ্রসহ বহু স্থাপনা। বর্তমানে হুমকির মুখে পরেছে উপজেলা কমপ্লেক্সসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘর।