*উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি *প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল :- জীবন আগে না ব্যবসা আগে। করোনার মহাদুর্যোগের মধ্যেও লঞ্চ মালিকদের কাছে ব্যবসাই আগে। তাই রোটেশন প্রথার মাধ্যমে পূর্বের তুলনায় কম সংখ্যক লঞ্চ চলাচলের কারণেই যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে চিরদিনের জন্য রোটেশন প্রথা বাতিল করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীদের চলাচলের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সচেতন নাগরিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্রমতে, করোনা প্রতিরোধে টানা ২ মাস ৭ দিন পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছেনা। লকডাউন শিথিলের পর থেকেই বরিশাল লঞ্চঘাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই যাত্রীচাঁপ সামাল দিতে না পেরে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা আগে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য করছে প্রশাসন।
বিআইডবিøউটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সরকার কর্তৃক গণপরিবহন ও লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকেই বরিশাল নদী বন্দরে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে লঞ্চ এবং বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষের পূর্ব প্রস্তুতি থাকলেও যাত্রীদের চাঁপে তা ভেঙে পরে।
এদিকে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চগুলো যাত্রী তুলছে কিনা এবং লঞ্চঘাটে কতোটা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে তা মনিটরিং করছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু যাত্রীদের চাঁপ এতোটাই বেশী যা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। আর তাই প্রতিদিন উপচে পরা ভীড়ের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাবার আশঙ্কায় ডেকে যাত্রী তোলা বন্ধ করে নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চগুলোকে ঘাট ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এরপরেও লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লঞ্চঘাট এলাকায় যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রশাসন ও বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থানে। কিন্তু দেশের এই করোনা দুর্যোগের মধ্যেও যাত্রীরা অনেকেই এ বিষয়ে উদাসীন। মাস্ক না পরে এবং সামাজিক দূরত্ব না মেনে লঞ্চে যাতায়াত করছেন অধিকাংশ যাত্রী।
বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষ জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আগে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি লঞ্চ চলাচল করতো। বর্তমানে করোনাকালীন সময়ে মাত্র চার থেকে ছয়টি লঞ্চ চলাচল করছে।
লঞ্চে ঢাকাগামী একাধিক যাত্রীরা বলেন, সামাজিক দূরত্ব আমরাও মেনে চলতে চাই। কিন্তু ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে লঞ্চ চলাচলের সংখ্যা খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে যাত্রা করতে হচ্ছে।
বিআইডবিøউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক ও নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, করোনা সংক্রমণের আগে নিয়মিত যেহারে লঞ্চ চলাচল করতো বর্তমানে তা কমে এসেছে। এরমধ্যে পারাবত লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মচারীদের নিরাপত্তার জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে। তিনি আরও বলেন, লঞ্চে একই পরিবারের পাঁচজন যাতায়াত করলে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব কোনটাই বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে লঞ্চে মাস্কের ব্যবহার ৯৫ ভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি এই কর্মকর্তার।
সচেতন বরিশালবাসীর মতে, চলমান করোনা দুর্যোগে যেখানে সাধারণ মানুষও নিজের খাবারের টাকা, ছোট্ট শিশুটিও স্কুলের টিফিনের টাকা তুলে দিচ্ছে ত্রাণ তহবিলে। সেখানে ব্যবসায়ীদের মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসা করা কতোটা শোভনীয়। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভাড়া বাড়বে না একটাকাও। আগের ভাড়াই চলবে। এটা তাদের একটা কৌশল মাত্র।
সূত্রে আরও জানা গেছে, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ভাড়া না বাড়ানোর কৌশল নিয়ে এই দুর্যোগের সময়ও রোটেশন প্রথা আরও কঠোর করেছে। সাধারন সময়ে রোটেশন করে প্রতিদিন ৫/৬টি লঞ্চ বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতো। একইভাবে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে অনুরূপ লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসতো। সেখানে বর্তমানে লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে যাত্রীদের করোনায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। রোটেশন বাদ দিয়ে বেশি সংখ্যক লঞ্চ চলাচল করলে যেমনি সামাজিক দুরত্ব বজায় থাকবে, তেমনি লঞ্চে থাকবেনা কোন ভীড়। থাকবেনা করোনা ছড়িয়ে পরার আশংকা। জাতির এই দুঃসময়েও লঞ্চ মালিকদের রোটেশন প্রথায় যেভাবে মানুষ লঞ্চে ঢাকা ছুটছেন, বা ঢাকা থেকে বরিশাল আসছেন, তাতে বর্তমানে উদ্বেগজনক হারে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দায়ভার কি লঞ্চ মালিকরা নেবেন। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন বরিশালবাসীর মধ্যে। তবে এসব অভিযোগ করেছেন লঞ্চ মালিক সমিতির একাধিক নেতারা।
উল্লেখ্য, ঈদ মৌসুমে রোটেশন প্রথা বাদ দিয়ে ২০টিরও অধিক লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া করতো।
স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার জরিমানা \ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, গণজমায়েত বন্ধ ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের নির্দেশে ৩ জুন বিকেল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বরিশাল লঞ্চ ঘাটে দুইটি মোবাইল কোর্ট টিম মাঠে অবস্থান নেন। জেলা প্রশাসনের চৌকস এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ নাজমুল হুদা ও মারুফ দস্তেগীর প্রতিটি লঞ্চের অভ্যন্তরে সচেতনামূলক মাইকিং করেন। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় লঞ্চ ছাড়ার আগমুহুর্তে লঞ্চে প্রবেশ করে পাঁচজন যাত্রীকে মাক্স না পরার অপরাধে দুই হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। অপরদিকে লঞ্চে সামাজিক এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে যাত্রী পরিবহন এবং টিকিট না কেটে লঞ্চে প্রবেশ করার অপরাধে তিনটি লঞ্চকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।