সিলেট নগরে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীর নাম ইকবাল হোসেন খোকা। তিনি সিলেট নগরীর কুমার পাড়ার বাসিন্দা এবং বন্দরবাজার এলাকার আরএল ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী।

এর আগে গত ১ জুন সিলেটের ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান এক নারী। এনিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যেই আবারও এমন ঘটনা ঘটলো। যদিও গত ২৪ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়, সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে তারা বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন ও সাধারণ রোগীদের জন্য পৃথক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করবেন।

মৃত ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকার ছেলে তিহাম হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার পিতার বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে নগরীর সোবাহানীঘাট এলাকার আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সেখানে বার বার তাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করলেও অক্সিজেনের ব্যবস্থা না করে তারা রোগীকে রাখবেন না জানিয়ে নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। দক্ষিণ সুরমা এলাকার নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের হাসপাতালে সিট খালি নেই, রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরও জানান, তারপর পরিচিত এক চিকিৎসকের পরামর্শে শহীদ ডা.শামসুদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে সবকিছু বন্ধ পেলে তখন এক নিরাপত্তাকর্মী গেটে এসে জানান, হাসপাতালের সবাই ঘুমে। এরপর রোগী নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে রোগীকে সিসিইউতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তব্যরতরা। তখন একটি ইসিজি করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইকবাল হোসেন খোকাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে আল হারামাইন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নাহিয়ান চৌধুরী অভিযোগ প্রসঙ্গে জানান, সকালে যে সময় ওই রোগী হাসপাতালে এসেছিলেন তখন তার আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিলো। মৃত ইকবাল হোসেন খোকা গত কয়েক দিন আগে এই হাসপাতালের ডা.শাহেদ আহমদকে দেখিয়েছিলেন। তখন ডাক্তার তাকে কিছু টেস্ট দেন এবং জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় করোনা পরীক্ষা করারও পরামর্শ দেন। এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকলেও আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকায় আমরা তাকে দ্রুত নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি। আমাদের আইসিইউতে ৫/৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায় আমরা করোনা সন্দেহভাজন রোগী কিভাবে আইসিইউতে নেব।

অভিযোগের ব্যাপারে নর্থইস্ট হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক জানান, করোনা ইউনিট চালু করার পর থেকে কোনো রোগী ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। যে অভিযোগ এসেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

সিলেটের সরকারি শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি না করার অভিযোগ অস্বীকার করে এই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত মহাপাত্র জানান, ভোরে এই রোগী আসার কথা একজন চিকিৎসক ফোনে জানালে জরুরি বিভাগকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয় কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও রোগী আসেনি। পরে শুনলাম রোগীর স্বজনরা আমাদের বিরুদ্ধে ভর্তি না করার অভিযোগ তুলেছেন। ভোর পৌনে ছয়টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের মূল গেইটের সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপর দুজন ব্যক্তি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে কিছু আলাপ করেন। তারা মূল গেইট পেরিয়ে হাসপাতাল চত্বরেই ঢুকেননি। প্রায় তিন মিনিট পর অ্যাম্বুলেন্সটি চলে যায়। যে রোগী হাসপাতালে আসেইনি তাকে আমরা ভর্তি করবো কি করে। এখন কেউ মিথ্যে অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে শুনেছি। সব হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

Share.
Exit mobile version