কোয়ারেন্টাইন এবং প্রিয়তমা
মুশফিক শুভ
১.
তোমাকে বলা হয়নি,
একটি ব্যার্থতার গল্প।
পৃথিবী জুড়ে যখন লাশের মিছিল;
তখনো আমরা নিরুপায়।
নিদারুণ নিনাদে ভেঙে পড়েছে- সভ্যতার শিরদাঁড়া।
আমরা এখন-
নিয়তি নির্ভর হয়ে নতজানু বিধাতার সমীপে।
বিধান শালায় ঝুলছে তালা;
অবশিষ্ট কেবল-
অদৃশ্যে সংরক্ষিত ভবিতব্য প্রকাশের অপেক্ষা।
২.
পৃথিবী জুড়ে লাশের মিছিল;
বিশ্বময় মহামারী আতংক।
রাজ আদেশ;
রাজপথে ঘুরে বেড়ানো বিপ্লবীরা ঘরে ফিরুক-
প্রেমিকাদের অপেক্ষার অবসান হোক।
আমি বলি- আমাকেও?
কর্তৃপক্ষের জবাব-
নিরাপত্তার বিবেচনায়,
সকলে’ই এই আদেশের আওতাভুক্ত।
তারপর- সাথীকে চিঠি লিখি।
প্রিয়তমা,
তোমার বুকের মাঝে’ই হোক-
আমার হোম কোয়ারেন্টাইন।
৩.
প্রিয়তমা;
ভীষণ অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলে বলে,
বলতে পারিনি-
এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের একজন সেবিকা প্রয়োজন।
৪.
কোয়ারেন্টাইন এ আছি;
সোজা বাংলায়-
স্বেচ্ছায় গৃহবাসী।
অবসর যাপনের বিলাসিতা- রুপ নিল অবসাদে।
তাই এই চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরে;
ইথারে ভেসে বেড়ানো ডেটার সমুদ্রে-
ঘুরে এলাম তোমার প্রোফাইল থেকে।
এ যেন ছবি ঘর!
রাত জাগা আঙুলে ছুঁয়ে দিচ্ছি-
তোমার স্থিরচিত্র।
ঘুম ভাঙলে,
ছবিগুলোর কাছ থেকে জেনে নিও-
স্পর্গুলো কতটা রঙিন ছিল,
কিংবা, কতটা বিষাদে বিবশ!
৫.
রাত পোহালো;
জানালার মোটা কাচ ভেদ করে-
সূর্যালোক চোখে পড়তে’ই ঘুম ভাঙে।
অথচ,
এই নির্জন পল্লী যেন ঘুমিয়ে আছে;
ঘুমিয়ে থাকবে- পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায়।
চোখ মেলে জানালার দিকে তাকাতেই;
চোখে পড়ে তোমার বাড়ির পথ-
আকা-বাকা নদীর পাড় ঘেঁষে ছুটছে নিরুদ্দেশ।
রাষ্ট্রীয় পাহাড়ায়,
এই পথ জেগে ছিল সারারাত;
অথচ, আমি ছিলাম- ঘুমকাতর।
প্রিয়তমা,
এই জেগে থাকা পথের সাথে;
জেগে থেক তুমিও-
আমি ফিরব, অতন্দ্র প্রহরীর চোখে ক্লান্তি এলে।
৬.
কোয়ারাইন্টেইনে থাকা প্রতিটি দিনগুলো যেন;
চৈত্রের অলস দুপুরের মত-
এক ঘেয়েমি রোদের দীপ্ততা।
গৃহবন্দী প্রতিটি মুহূর্ত যেন-
হাজার বছরের সমান ক্লান্তিমাখা।
আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখি;
জানালার পর্দা-
তোমার আঙুলের স্পর্শে কেঁপে ওঠে বারবার।
ডাক্তার বলে-
এসব আমার হ্যালুসিনেশন।
অথচ,
কারও জানা নেই;
আমাদের এতটা দূরে থেকেও কতটা কাছে থাকা!
৭.
একদিন,
এই পথে ছিল কোলাহল- মুখরিত কলতান।
তা আজ,
হারিয়ে ফেলেছি নির্জনতায়।
প্রিয়তমা,
আবারো ফিরবে সুদিন।
আমারাও
হাতে হাত,
চোখে চোখ রেখে;
এই পথ ধরে হারিয়ে যাব- অনাদি সুখের উল্লাসে।