প্রতিদিনের মতই তনু সেদিনও বিকেল চারটায় শুভ্রর জন্য অপেক্ষায় ছিল। বেকার হলেও শুভ্রর অন্তহীন ব্যস্ততা, যদিও তার কারন অজানা। অবশ্য, এই অপেক্ষায় তনু বিব্রত নয়। প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা করতে তার ভাল’ই লাগে। তবে এটা অভ্যাস নয়, আনন্দের উপলক্ষ মাত্র। দেরিতে হলেও শুভ্র এসে পৌঁছাল, এটাই আপাদত আনন্দের বিষয়। তবে তনুকে দেখেই শুভ্রর মুখ মলিন। তনু জিজ্ঞাসা করে- কি হল? মন খারাপ কেন?
– তুমি আজ আবার লিপস্টিক দিয়েছ?
– হ্যাঁ, দিয়েছি। প্রতিদিন’ই তো দেই।
– আর দিবে না।
– কেন? তুমি জান না, আমি কেবল তোমার জন্যই সাজি।
– তা জানি।
– তবে?
– তবুও, তোমার ঠোঁট খুব সুন্দর। লিপস্টিক দিলে সৌন্দর্যটা আড়ালে চাপা পড়ে।
– আচ্ছা, আর দিব না। এবার বল, তোমার দেরি হল কেন?
– মানে……..
– মানে কি?
– আসার সময় কয়েকটা লাইন মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই কবিতাটা না লিখে স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। লেখাটা শেষ করেই এলাম।
– তোমাকে না আপাদত লেখালেখি বন্ধ রাখতে বলেছি?
– লেখা বাদ দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব, তা তুমি ভাল করেই জান।
একটু শান্ত স্বরে তনু বলে- দেখ, এই মুহূর্তে তোমার একটা চাকরি খুব প্রয়োজন।
– চাকরির জন্য চেষ্টা করছি’তো।
– হয় এই মাসের মধ্যে একটা চাকরির ব্যাবস্থা কর, না হলে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ কর।
– কেন? কি হল?
– বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আমার বিয়ের পর তুমি সারা জীবন কবিতা লিখ। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে বই মেলায় তোমার বই কিনতে যাব।
– বুঝেছি তোমার মন খারাপ। কবিতাটা পড়ে শুনাই, তোমার মন ভাল হয়ে যাবে।
– তুমি বসে বসে চেয়ার, টেবিল আর দেয়ালকে কবিতা শোনাও।
এই কথা বলেই তনু চলে যায়। দুইজন শারীরিক ভাবে আলাদা হলেও মন যেন এক বিন্দুতে পড়ে আছে। দু’জনেই মানসিক অস্বস্তিতে ভুগছে, তবু তনু নিরুপায়। শুভ্রর মাঝে দায়িত্ববোধ তৈরি করার জন্য এটাই একমাত্র উপায়। শুভ্র বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তনুর ফোন বন্ধ পায়। সেই থেকে শুভ্র ভাবতে শুরু করে- আমি কবিতা ছাড়তে পারব না, তাই বলে চাকরি পাওয়া তো আর অসম্ভব নয়। তাই সে চাকরির জন্য চেষ্টা করে। শুভ্র মেধাবী ছাত্র, তাই চাকরির প্রস্তুতি নিতে তেমন কষ্ট হয়নি। অবশেষে ছত্রিশ দিন পর তাদের আবার দেখা। সেই সময়, সেই স্থান। সেদিন দেখা হতেই শুভ্র বলে- তুমি আজও লিপস্টিক দিয়েছ?
– হ্যাঁ। তুমি জান না, আমি কেবল তোমার জন্যই সাজি।
– ও, আচ্ছা! আমার মনে কবিতার দুইটা লাইন ঘুরপাক খাচ্ছে।
– আবার?
– হ্যাঁ, শুনবে তুমি?
টেবিলে কনুই ভর করা হাতে গাল রেখে, মুচকি হেসে তনু বলে- আচ্ছা শোনাও। তারপর প্রেম প্রেম বিরক্তি মাখা স্বরে বলে- তবে ঐ দুই লাইন’ই।
শুভ্র বলে-
এবার আমি লিপস্টিক হই,
রঙ বেরঙে তোমার ঠোঁট ছুঁই।
মুশফিক শুভ