খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল :- করোনাভাইরাস নির্ণয় ও চিকিৎসা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবামেক) ও দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) শিক্ষকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে করোনা প্রতিরোধক ডিভাইস (কীট)। আর এ ডিভাইসের নামকরণ করা হয়েছে কোভিড কীট (করোনা ভাইরাস কিলিং)।

ডিভাইসটির আবিস্কারক শেবামেকের নিউরোমেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডাঃ এইচএম মাসুম বিল্লাহ এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রেহানা পারভী রবিবার সকালে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রমতে, ডাঃ এইচএম মাসুম বিল্লাহ এবং ড. রেহানা পারভীনের যৌথ উদ্যোগে করোনা প্রতিরোধ কীট তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে যা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগ থেকে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্স কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই দুই আবিস্কারক।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধক কীট তৈরি প্রজেক্টের প্রধান পরিদর্শক (পিআই) ডাঃ এইচএম মাসুম বিল্লাহ বলেন, ডিভাইস তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। গত ১২ মে আমরা ইথিক্যাল অ্যাপরোভালের জন্য বিএমআরসিতে আবেদন করেছি। তারা বুয়েটের ছাড়পত্র চেয়েছেন। যা গত ৬ জুন পেয়ে ৮ জুন বিএমআরসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। এবার বিএমআরসির অনুমোদন পেলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ২০ জন করোনায় আক্রান্ত রোগীর ওপর এটি নিয়ে কাজ করা হবে। তারপরই এটির প্রসার ঘটনোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দাপ্তরিক কিছু জটিলতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে অনুমোদন পেতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে আশা করছি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই বিএমআরসি ডিভাইসটির অনুমোদন দিবে।

ডিভাসটির আবিস্কারক টিমের অন্যতম উদ্ভাবক ড. রেহানা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, মূলত মানুষের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বাতাসে ছড়ায়। যা পরবর্তীতে সুস্থ্য ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধী এই কীটের মাধ্যমে আক্রান্ত মানুষের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বনডাইঅক্সাইড পুরোপুরি করোনাভাইরাস মুক্ত হয়ে পরিবেশে যাবে। কারণ এটিতে ভেন্টিলেটরের মাস্কের মতো একটি অংশ রয়েছে। যা নিঃশ্বাস থেকে নির্গত করোনা ভাইরাসকে মূল ডিভাইসে নিয়ে গিয়ে জীবাণুমুক্ত করবে।

তিনি আরও বলেন, এই ডিভাইসের সুবিধা হচ্ছে এটি ব্যবহারের ফলে তার দ্বারা অন্য কেউ সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। বর্তমান সময়ে মানুষের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাতাসের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে এ কীট যুগান্তকারী কাজ করবে। তিনি বলেন, এটি বহনযোগ্য আর তাই কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হন এবং উপসর্গ না থাকে তাহলে সেও তার দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। যেমন গার্মেন্টসের কোনো এক কর্মী করোনায় আক্রান্ত কিন্তু তার কোনো উপসর্গ নেই, শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ্য রয়েছেন। তিনি যদি এটি ব্যবহার করেন তাহলে তার নিঃশ্বাস থেকে ভাইরাস সংক্রমণের কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ ডিভাইসটি ভাইরাসকে মেরে ফেলবে। আর এ ডিভাইসের সুবিধা হচ্ছে এটি ব্যবহারের ফলে তার দ্বারা অন্য কেউ সংক্রমিত হওয়ারও সুযোগ থাকবে না।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ অসীত ভূষণ দাস বলেন, বিষয়টি অতিগুরুত্বপূর্ণ। তাই এনিয়ে আমরা সার্বক্ষনিকভাবে যোগাযোগ রাখছি। পাশাপাশি বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবগত করা হয়েছে। তারাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমি বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বর্তমান পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে শতভাগ আশাবাদি।

Share.
Exit mobile version