এলিসন সুঙ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :- পান বাংলাদেশের একটি  অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশে প্রায় সব এলাকাতে কম বেশী পান চাষ করা হয়। পারিবারিক ও সামাজিক অথবা সাংস্কৃতিক আচার অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে একখিলি পানের প্রচলন আবহমান  বাংলার ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি । গাছপান একমাত্র সিলেট বিভাগ অধীনে জেলাসমূহ হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার পাহাড়ি উঁচুনিচু টিলায় চাষ করা হয়।বাংলাদেশে খাসিয়া পান নামে পরিচিত।
প্রকৃতি উদ্ভিদকে যত্ন করে চাষ করা হয় খাসিয়া পানের জুম।খাসিয়া সম্প্রদায়ের প্রধান জীবন-জীবিকা আয়ের উৎস হল পান।কিন্তুু বর্তমানে কাল পরিবর্তন ফলে খাসিয়া পানের বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা যায়।বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে রোগের প্রভাব বেশী দেখা যায়।আঞ্চলিক ভাষায় রোগগুলোকে নাম করণ করা হয় উ-ট্রাম(পাতা দাগ)  উক্লাম(গুড়া পচা) আরও নানা রকমের ক্ষতিকারক পোকামাকড়  বিদ্ধমান রয়েছে। এই সব রোগের কারণে  হাজার হাজার খাসিয়া পানের গাছ প্রতিনিয়ত বিলীন হচেছ।
আদিকাল নিয়মে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা করলেও বর্তমানে খাসিয়া পানের চাষীরা সুফল মুখ দেখতে পারছেনা।অতি রোগবালাই ও মাটির উর্বরতা হাস্র হওয়াতে খাসিয়া পানের ফসল তুলনামূলক উৎপাদন কম হচেছ। কারিতাস সিলেট অঞ্চল “সক্ষমতা প্রকল্প “সার্বিক সহযোগীতায় পানের রোগ থেকে উত্তোরনের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। খাসিয়া পানের রোগ গবেষণা ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন সিলেট কৃষি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মনোনীত একটি গবেষণা দল।বিগত বছর ২৫মে মৌলভীবাজার জেলা কুলাউড়া উপজেলা মেঘাটিলা পুঞ্জি ও কমলগঞ্জ উপজেলা পাত্রখোলা পুঞ্জিতে খাসিয়া পানের রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধ এবং পরিবেশ বান্ধব কার্যকর দমন ব্যবস্থাপনা উদ্দেশ্য পান বাগানে পরিদর্শন করেন।
গবেষণা দল সরজমিনে বিভিন্ন রকমের পানের রোগ ও পোকামাকড় সংগ্রহ করে,সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পানের রোগগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা দান করেন। গবেষণা দল তিন সপ্তাহ অন্তর অন্তর সরজমিনে পরিদর্শন করে,পরীক্ষামূলক আক্রান্ত পানে  জৈবিক প্রতিষেধক স্প্রে করেন।সিলেট কৃষিবিদ্যালয়ের গবেষণা দল একবছর ব্যাপী এই কার্যক্রম পরিচালনা দান করে আবিষ্কৃত করেন খাসিয়া পানের জৈবিক পদ্ধতিতে পানের রোগবালাই দমন প্রতিষেধক। জৈবিক পদ্ধতি  পানের রোগদমন প্রতিষেধক পরীক্ষা  মূলক কমলগঞ্জ উপজেলা পাচঁটি খাসিয়া পুঞ্জি  ও কুলাউড়া উপজেলা সাতটি খাসিয়া পুঞ্জিতে  মোট ৪০জন পান চাষীকে এই প্রতিষেধক  বিতরণ করা হয়। জৈবিক পদ্ধতি পানের রোগ দমনের ব্যবহারিক নিয়মনীতি মালটীমিডিয়া  প্রদর্শন মাধ্যমে শিখানো হয়।
সিলেট কারিতাস সক্ষমতা প্রকল্প প্রোগ্রাম অফিসার বনিফাস খংলা সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার ড.মো:শহীদুল ইসলাম, প্রফেসার ড.আবুল মুকিত,প্রফেসার ড.মো:আব্দুল মালেক প্রমুখ। সভাপতি বলেন কারিতাস মানব জীবন  উন্নয়ন জন্যে সর্বদা কাজ করে থাকেন। সিলেট বিভাগে বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়ন লক্ষ্যে কাজ করে থাকেন। পানের রোগ থেকে সুফল লাভ হলে শুধু পান চাষী নয়,দেশের অর্থনীতি দিক দিয়েও কিছু হলেও সক্ষম হবে বলে আশা করেন।সিলেট কৃষিবিদ্যালয়ের গবেষণায় জৈবিক পদ্ধতিতে খাসিয়া পানের রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা নামে সহায়ক বই প্রকাশ  হয়েছে।
সিলেট বিভাগের অধীনে সকল জেলা, উপজেলায় কারিতাস অফিস থেকে বইটি পান চাষীরা  সংগ্রহ করতে পারবে বলে ব্যক্ত করেন। পানের রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা ধারাবাহিকতায় ১৬ জুন মঙ্গলবার  কমলগঞ্জ উপজেলা হিরামতি কাটাবিল পুঞ্জিতে পানের বাগানে পরিদর্শন কালে খাসিয়া পানের চাষী নবীন লাপাসাম বলেন কারিতাস সহায়তায় জৈবিক  পদ্ধতিতে রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য পানের রোগ প্রতিষেধক পেয়ে তা পানের গাছে মাঝে প্রয়োগ করেছি। বর্তমানে পানগাছ ভাল হচেছ ও রোগবালাই পোকামাকড় দমন হয়েছে বলে অনুভূতি প্রকাশ করেন।
Share.
Exit mobile version