খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল :- স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ২৭টিকেই রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব এলাকার তথ্য পাঠানোর পাশাপাশি ঢাকা থেকে দেয়া জরুরি বার্তায় রেড জোন এলাকা লকডাউন করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বুধবার সকালে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, চলমান বাস্তবতায় এখনই পুরো সিটি কর্পোরেশন এলাকা লকডাউন করা সম্ভব নয়। আপাতত মডেল হিসেবে নগরীর ছোট্ট একটি এলাকা অথবা ২/১টি ওয়ার্ড লকডাউন করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা হবে। সব শর্ত মেনে আলোচ্য পাইলটিং বা মডেল এলাকায় লকডাউন সফল করা গেলে পরবর্তীকালে অন্যান্য এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হবে।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, নগর এলাকায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন। তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে তারা কাজ করবেন।
সরকারি হিসেবে বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৮৩ জন। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত নতুন করে ১৯ জন আক্রান্তসহ পুরো জেলায় ৯৯৭ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে নগরীতেই মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৭৬৫ জন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাতজন।

অপরদিকে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ৬৬৯ জন। সেখানে এই সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই বরিশাল নগরীর বাসিন্দা। পুরো বিভাগে মারা যাওয়া ৩৪ জনের মধ্যে নগরীতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার ঢাকা থেকে আসে রেড জোনের ঘোষণা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় থেকে আসা ওই নির্দেশনায় নগরীর ২৬, ২৭ এবং ৩০নং ওয়ার্ডকে গ্রিন জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বাকি ২৭টি ওয়ার্ড-ই রেড জোন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যাপিংয়ে এখানে কোনো ইয়েলো জোন নেই বলেও উল্লেখ রয়েছে।

বরিশালের সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, রেড জোনের ম্যাপ পাঠানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক আমাকে ফোন করে তাদের দেয়া নির্দেশনা দ্রæত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনায় রেড জোন ঘোষিত এলাকায় লকডাউন ঘোষণাসহ তিনি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছেন। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করে বরিশালের সংশ্লিষ্ট সব দফতরের প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এখনই নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড লকডাউন হবে কিনা জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন বলেন, লকডাউন হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশন। সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা ও জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবো। তিনি আরও বলেন, এবার লকডাউন বাস্তবায়ন প্রশ্নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যে সব নির্দেশনা রয়েছে তার সবগুলো আয়োজন সম্পন্ন করে লকডাউনের ঘোষণা দিতে হবে। এখানে অনেকগুলো বিষয় এবং দফতর জড়িত। সেসব সম্পন্ন করেই আমরা লকডাউনে যেতে পারবো।
জেলা প্রশাসক এসএস অজিয়র রহমান বলেন, রেড জোন হিসেবে বরিশাল নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড লকডাউন বিষয়ে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। যেহেতু এক সঙ্গে ২৭টি ওয়ার্ড লকডাউন করার ক্ষেত্রে অনেক বড় ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে, তাই আমরা এখনই সেদিকে যাচ্ছিনা। তাছাড়া এই পদ্ধতি বাস্তবায়নে আমাদের কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, সে সম্পর্কেও স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। তাই প্রাথমিকভাবে আমরা নির্দিষ্ট একটি এলাকা লকডাউন করবো। পাইলটিং হিসেবে ওই নির্দিষ্ট এলাকার লকডাউনকালীন উদ্ভূত সব পরিস্থিতির মোকাবেলা এবং শিক্ষা গ্রহনের পর আমরা নগরীর বাকি রেড জোনগুলোতে লকডাউন দেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

শুরুতে পাইলটিং হিসেবে বরিশাল নগরীর কোন এলাকা লকডাউন করা হবে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, আমরা ম্যাপিং’র কাজ করছি। সবদিক বিবেচনা করে ঠিক করা হবে কোন এলাকায় পাইলটিং হিসেবে লকডাউন করা হবে। সেক্ষেত্রে নগর ভবন এবং জেলা প্রশাসনও কাজ করছে।
এদিকে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আসা রেড জোনের ম্যাপিং অনুযায়ী নগরীর ১২নং ওয়ার্ডে করোনা শনাক্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে। এই ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা ১৪ হাজার ৬১১ জন। আর ১২ জুন পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডে শনাক্ত হওয়া মোট করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৮৮ জন। এছাড়া ৫ হাজার ৭৯১ জন বাসিন্দার এলাকা ১১নং ওয়ার্ডে ৮১ এবং ৬ হাজার ৩৬০ জন বাসিন্দার এলাকা ১৬নং ওয়ার্ডে ৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

নগরীতে মোট শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীদের মধ্যে পুলিশ সদস্য রয়েছেন ১৫৬ জন। এছাড়া পুলিশ পরিবারের সদস্য রয়েছেন ১৬ জন। তালিকা অনুযায়ী উল্লেখিত তিনটি ওয়ার্ড কিংবা এর যেকোনো একটি ওয়ার্ডে পাইলটিং হিসেবে শুরু হতে পারে লকডাউন। তবে ওই তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডের মধ্যেই রয়েছে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান কার্যালয় ও পুলিশ লাইনস্।

Share.
Exit mobile version