এলিসন সুঙ,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে পারিবারিক মতামতে বিয়ে হয়েছিলো বিনতা রাণী বিশ্বাস আর রুপেন্দ্র বিশ্বাসের। বিয়ের বছর চারেকের মধ্যেই সংসার আলো করে এসেছিল ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান। কিন্তু স্বামী প্রবাসে চলে যাওয়ায়।এই সুযোগে স্ত্রী বিনতা জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় এক যুবকের সাথে পরকীয়ায়। একসময় সেই পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।  বিগত প্রায় তিনবছর ধরে পরকীয়া প্রেমিকের সাথেই বসবাস করছিলেন । অবশেষে পুণ্যরায় সেই প্রবাসী স্বামীর বাড়িতে ফিরে এসেছেন তিনি ।  তবে এ ফিরে আসা বধূবেশে নয়। বরং দা, শাবল নিয়ে হাজির হয়ে স্বামীর তালাবন্ধ ঘরের দরজা ভেঁঙ্গে জরুরী কাগজপত্র ও মালামাল লুট করে নিয়ে যান। এসময়  বাড়ির কেয়ারটেকার তাকে বাঁধা দিলে হামলা ও মামলার ভয় দেখান।
এ বিষয়ে কেয়ারটেকার রত্নময় বিশ্বাস থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও কয়েক দফা সালিস বসিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে না পেরে ইউএনও বরাবরেও লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন গ্রামবাসীগণ।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের পানিশাইল গ্রামে।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাসের বাজার ইউনিয়নের পানিশাইল গ্রামের গৃহবধু বিনতা রানী বিশ্বাসের স্বামী রুপেন্দ্র বিশ্বাস বিয়ের ৬ মাস পর প্রবাসে চলে যান। স্বামী প্রবাসে থাকার সুবাদে বিনতা রানী একই ইউনিয়নের মাইজমজুরী গ্রামের পিযোষ বিশ্বাসের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, পিযোষ প্রায়ই রাতের বেলা গৃহবধু বিনতার বাড়িতে এসে পরকীয়ায় লিপ্ত হতেন। প্রায় তিনবছর আগে এক রাতে এলাকার লোকজন, বিনতা ও পিযোষকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়ে আটক করেন। পরে এনিয়ে গ্রাম্য  সালিশ হয়। সালিশে উভয় গ্রামের মুরব্বী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধীদের উপস্থিতে পিযোষকে গ্রামে না আসার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় । এই ঘটনার ৭ দিন পর পিযোষর হাতধরে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান বিনতা। সাথে নিয়ে যান প্রথম পক্ষের একমাত্র সন্তানকেও। এখবর পেয়ে প্রবাস থেকে যোগাযোগের বহু চেষ্টা করেন স্বামী রুপেন্দ্র। অবশেষে চলতি বছরের প্রথম দিকে দেশে আসেন তিনি। বাড়িতে এসে গ্রামের লোকজনের মাধ্যমে স্ত্রী বিনতার বাবার দ্বারস্থ হয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন । এরপর মার্চ মাসের প্রথম দিকে আবার প্রবাসে চলে যান তিনি।তার বাড়িঘর দেখোশোনার দায়িত্ব  দিয়ে যান স্থানীয় রত্নময় বিশ্বাসকে। এরপর গত ১০ জুন দুপুর বেলা হঠাৎ বিনতা রানি বিশ্বাস বাড়িতে এসে শাবল দিয়ে বসত ঘরের তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে ষ্টিলের আলমিরা ভেঙ্গে জরুরী কাগজ পত্র ও মালামাল  লুট করে নিয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিনতা তার পরকীয় প্রেমিকের সাতে বিয়ানীবাজার এলাকায় বসবাস করছেন। তার সাথে ১১ বছর বয়সী ছেলেও রয়েছে।
এ বিষয়ে স্বামী রুপেন্দ্র বিশ্বাস দুবাই থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘বিয়ের ৬ মাস পর আমি প্রবাসে চলে যাই।এ সুযোগে পার্শবর্ত্তী মাইজমজুরী গ্রামের পিযোষ বিশ্বাসের সাথে আমার স্ত্রী বিনতা বিশ্বাস পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। আমি প্রবাস থেকে শুনে অনেক চেষ্টা করেছি তাকে ফেরাতে।আমি দেশে এসেও অনেক চেষ্টা করেছি । কোনভাবেই তাকে ফেরাতে পারি নি। এখন আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। আমার অনুপস্থিতে কেয়ারটেকারকে ভয় দেখিয়ে আমার ঘরের থাকা জরুরী কাগজপত্র  মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।  আমি বিচার চাই।
এ ব্যাপারে গ্রামের মুরব্বি অকিল বিশ্বাস বলেন,  রুপেন্দ্র বিশ্বাস একজন সহজ সরল মানুষ, সে বিয়ের পর তার স্ত্রী কে বাড়িতে রেখে প্রবাসে চলে যায়। এ সুযোগে তার স্ত্রী পিযোষ নামে একটি ছেলের সাতে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। প্রায় তিন বছর আগে রাতের বেলায় ঘরের মধ্যে তাদের দু’জন কে অপ্রিতিকর   অবস্থায় পাওয়া গেলে পিযোষর অভিবাবক ও  আমাদের এলাকার মুরব্বিয়ানা গন বসে এলাকার ইজ্বত রক্ষারত্তে বিষয়টি  সমাধান করি। এর ৬ দিন পর রুপেন্দ্ররে স্ত্রী কে নিয়ে পালিয়ে যায় । পরে জানতে পারি তারা বিয়ানীবাজারে ভাড়া বাসায়  বসবাস করছে। আমরা বিষয়টি রুপেন্দ্রকে অবগত করি। সে তার বাড়িটি একা তাকায় গ্রামের মুরব্বিগণ দের মাধ্যমে রত্নময় বিশ্বাসকে দেখাশোনা  করার দায়িত্ব  দেওয়া হয়। পরে সে বাড়িতে এসে তার স্ত্রী কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। আনতে না ফেরে সে আবার প্রবাসে চলে যায়। গত ১০ জুন তার স্ত্রী হঠাৎ করে বাড়িতে এসে ঘরের তালা ভেঙ্গে ঘর থেকে কাগজ পত্র ও মালামাল নিয়ে যায়। বিষয়টি আমাদেরকে কেয়ারটেকার রত্নময় বিশ্বাস অবগত করলে গ্রামের লোকজন দ্রুত এসে দেখতে পান রুপেন্ডর স্ত্রীর হাতে দা ও শাবল দিয়ে তালা ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে ষ্টিলের আলমিরা ও ভেঙ্গে মালামাল বাহির করছে। কেয়ারটেকার ও এলাকাবাসী বাধা দিলে হামলা ও মামলার হুমকি দেয়। আমরা সাথে সাথে স্হানীয় ইউপি সদস্য ও ইউএন ও এবং থানায় ফোন করে জানাই। পরে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা কাছে ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
রত্নময় বিশ্বাস বলেন,   ‘প্রবাসী রুপেন্দ্র বিশ্বােসের স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে আছি। গত ১০ জুন আমি বাড়ীতে ছিলাম না, বেলা ১১টার দিকে তার স্ত্রী বিনতা রাণী বিশ্বাস হঠাৎ বাড়িতে এসে আমার স্ত্রী কাছে চাবি চাইলে তাতে আমার স্ত্রী চাবি দিতে অসম্মতি প্রকাশ করায় বিনতা হাতে দা শাবল দিয়ে ঘরের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে। আমার স্ত্রী বাধা দিলে তাকে হুমকি দেয়। এসময় আমার স্ত্রী পার্শবর্ত্তী বাড়ীতে সহ এলাকা লোকজনকে ডাকাডাকি করে আনেন। তখন আমাকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে আমার স্ত্রী জানান। এলাকার মুরব্বিরা ও আমি বাধা দিলে সে কারও কথা শুনেনাই, এমকি আমাকে সহ উপস্হিত সবাইকে হামলা ও মামলার হুমুকি দেয়। বিষয়টি মোবাইল ফোনে রুপেন্দ্রকে জানালে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। আমি বড়লেখা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
বড়লেখা  থানার এসআই হযরত আলী মুটোফোনে জানান, ঘরের তালা ভেঙ্গে মালামাল লুটের ব্যাপারে বাড়ির কেয়ারটেকার রত্নময় বিশ্বাস অভিযোগ করেছে বলে ব্যক্ত করেন।
Share.
Exit mobile version