ভ্রাম্যমাণ জেলা প্রতিনিধি, পাবনা:- প্রাচীনতম রেলওয়ে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ২৬ কিলোমিটার রেলসংযোগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৩৫ কোটি টাকা।
ঈশ্বরদী থেকে নতুন রেললাইন ও নতুন স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে।
আর রেলওয়ের যাত্রীসেবার মনোন্নয়নের জন্য ব্রিটিশ আমলের পর থেকে উন্নয়নবঞ্চিত ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনকেও করা হচ্ছে আধুনিকায়ন।
এই জংশন স্টেশনে একসঙ্গে ১৮টি ট্রেন দাঁড়ানোর জন্য রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ (ডুয়েল) লাইনের জন্য দুই পাশে সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
কাজের ও ব্যবহৃত মালামালের মান এবং কাজের অগ্রগতি দেখতে শনিবার (০৪ জুলাই) ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন পরিদর্শন করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা।
রেলওয়ের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটি গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া পড়েনি এ জংশন স্টেশনে।
পুরোনো বিল্ডিং, ট্রেনের উচ্চতার চেয়ে কয়েক ফুট নিচু প্ল্যাটফর্ম, ছাউনি ফুটো, যাত্রীদের বিশ্রামাগারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংরা ও ব্যবহারের অনুপযোগী টয়লেট, যাত্রীদের বসার স্থানের জায়গা সংকট, লাইনগুলো অতি পুরনো, নড়বড়ে এবং মাদকাসক্ত, চোর, ছিনতাইকারী, প্রতারকসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ স্থান ছিল ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা।
২০১৯ সালের ২২ জুন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন পরিদর্শনে আসলে সেই সময় স্টেশনে উপস্থিত স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ট্রেনযাত্রীরা স্টেশনের সমস্যাগুলো মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে স্টেশনটিতে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারকে নির্দেশ দেন।
সেই নির্দেশনাই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (আরএনপিপি) রেললাইন নির্মাণ, নতুন স্টেশন স্থাপন, রেললাইন সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজের পাশাপাশি ঈশ্বরদী প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য প্ল্যাটফর্ম সংস্কার, একই সঙ্গে ১৮টি কোচ দাঁড়ানোর উপযোগী করতে সম্প্রসারণ, ট্রেন থেকে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের খুব সহজেই নামার সুবিধার্থে প্ল্যাফর্ম উঁচুকরণ, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক টয়লেট, বসার স্থান, বিশ্রামাগারসহ রেলওয়ে স্টেশনটিকে কম্পিউটারাইজড ও ডিজিটাল ইয়ার্ড, নতুন সিগন্যাল ভবন নির্মাণ ও সিগন্যালকে ডিজিটালাইজডকরণসহ নানামুখী উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এই কাজটি ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন লি. অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার লি. জয়েন্ট ভেঞ্চার কম্পানির মাধ্যমে করা হচ্ছে।
সরেজমিনে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় রেললাইন সম্প্রসারণ, পুরনো রেললাইন সংস্কার, যাত্রীদের বসার স্থান নির্মাণ ও সংস্কার, শেড মেরামত, প্ল্যাটফর্মকে সব বয়সী ও রোগীদের ট্রেনে ওঠা-নামার জন্য উঁচু করার, আধুনিক সিগন্যাল ভবন, উন্নত মানের টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে।
কাজ তদারককারী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আইডাব্লিউ মো. আবু তৌহিদ সুমন জানান, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনের উন্নয়নের কাজগুলো স্ট্যান্ডার্ড মানের করা হচ্ছে। কাজে ব্যবহৃত রড, বালু, পাথর, সিমেন্ট ল্যাব টেস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরো জানান, স্টেশনের সব কাজ সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে তিনিসহ পিডাব্লিউ (পদ) তদারকি করছেন। পাশাপাশি পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) ও প্রকৌশলী-২ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা তদারকি করছেন।
রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আসাদুল হক জানান, এ স্টেশনসহ সব স্টেশনেই যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের জন্য নানামুখী উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যেই স্টেশনটি আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী ও সুযোগ-সুবিধাজনক করে তোলার কাজ চলছে।
তিনি আরো জানান, মান্ধাতা আমলের এনালগ প্রযুক্তি বাতিল করে কম্পিউটারাইজড ও ডিজিটালভাবে পুরো ইয়ার্ড ও স্টেশন এলাকাকে প্রযুক্তিনির্ভর করা হবে। পুরো ইয়ার্ডকে ডিজিটালে রূপান্তর করে একটি কক্ষের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হবে।
খুব শিগগিরই এসব কাজ শেষ করবে বলে আশা করছেন।
Share.
Exit mobile version