রাঙা প্রভাত ডেস্কঃ করোনা( কভিড-১৯) পরীক্ষার টেস্ট না করেই রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রতারণা নিয়ে দেশে তোলপাড় চলছে। এই প্রতারণার মূলহোতা জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দম্পতির জীবনও রূপকথার গল্পের মতো। আরিফের চতুর্থ স্ত্রী সাবরিনা। আরিফের এক স্ত্রী থাকেন রাশিয়ায়, অন্যজন লন্ডনে। আরেকজনের সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তবে ছাড়াছাড়ির পরও সাবেক ওই স্ত্রী উচ্চমহলে আরিফের জন্য দেনদরবার করে যাচ্ছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত সাবরিনার হাত ধরেই করোনার স্যাম্পল কালেকশনের কাজটি ভাগিয়ে নেয় অনেকটা অখ্যাত জেকেজি নামে এই প্রতিষ্ঠান। প্রথমে তিতুমীর কলেজের মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি মিললেও প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার অন্য এলাকা এবং অনেক জেলা থেকেও নমুনা সংগ্রহ করছিল তারা। স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্ট করলেও তাঁদের দাম্পত্য জীবন সুখের নয়। স্ত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এক চিকিৎসককে মারধর করেন আরিফ চৌধুরী। পরে এ ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলানগর থানায় জিডি করেন ডা. সাবরিনা। এ ছাড়া জেকেজির এক কর্মীকে অশালীন প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় গুলশান থানায় আরিফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বিএমএর নেতার পরিচয় ভাঙিয়ে চলাফেরা করেন ডা. সাবরিনা।
জেকেজির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে প্রমাণ করতে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, অনেক আশা নিয়েই জেকেজি হেলথকেয়ার শুরু করেছিলাম বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য! কোনো জিনিস প্রতিষ্ঠা করাই বড্ড কঠিন! অনেক কষ্ট করেছি! করোনা বিপর্যয় শুরু হওয়ার পর প্রথম এলাকাভিত্তিক স্যাম্পল কালেকশন শুরু হয়- কত মানুষের কত রকম বাধা! কোনো দোকান খোলা নেই, জিনিসপত্র নেই, কেউ ভয়ে করোনা নিয়ে কাজ করতে চায় না! সব পেরিয়ে পথ চলা!
কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান থেকেই আমাকে সরে আসতে হয়! যাঁরা আমাকে কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা জানেন– আদর্শ আর ভালোবাসার কনফ্লিক্টে আমি সব সময় আদর্শকেই বেছে নিয়েছি! ৪-৬ তারিখেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ল্যাবের অধ্যাপক তুষার স্যার এবং আমার কাছে যে কজন সাংবাদিক ভাই ও বোনের নম্বর ছিল তাঁদের জানিয়ে আমি সরে যাই এখান থেকে! আমি চলে গেছি মানে এই নয় যে, এখানকার কোনো সমস্যায় আমি পুলকিত হব বা তা আমাকে ছোঁবে না! যদি কেউ দোষ করে থাকে, তার প্রমাণ সাপেক্ষে অবশ্যই সাজা হবে! হওয়াই উচিত! তবে আমার প্রশ্ন হলো– দু-একজন কর্মচারীর নামে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটা প্রতিষ্ঠান যে এত দিন ধরে সেবা দিয়ে গেছে, সব মুহূর্তেই মিথ্যা হয়ে যাবে?
আমার বেশির ভাগ এফবি ফ্রেন্ড আমার জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন, ভরসা দিয়েছেন- তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা! যাঁরা চিরকালই আমার দোষ বের করতে পেরে বিমল আনন্দ পেয়েছেন, তাঁদের জন্য এই পোস্ট নয়…।
সাবরিনার পেশাগত দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন শুক্রবার, সাবরিনার বিষয়টি হাসপাতালের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালককে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। ডা. সাবরিনার বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখছি। তাঁর স্বামী আরিফ চৌধুরী স্বীকার করেছেন, সাবরিনা জেকেজি হেল্থ কেয়ারের চেয়ারম্যান। এর পরও তথ্য-প্রমাণ যাচাই করে দেখা হচ্ছে। সাবরিনা কেন, যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
Share.
Exit mobile version