কামরুল হাসান সোহাগ, বিশেষ প্রতিবেদকঃ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার (১৯ জুলাই)। ২০১২ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নন্দিত এই গুনিজন।
একজন হুমায়ূন আহমেদ একাধারে লেখক,সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার,নাট্যকার এবং অধ্যাপক। যার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ ই নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে। তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অগ্রদুত। এই খ্যাতিমান লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় তিন শতাধিক। ‘নন্দিত নরকে’ নামে তার প্রথম উপন্যাস ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়।
হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট হিমু, মিসির আলী বা শুভ্র চরিত্রগুলি নিয়ে ভাবলেই বুঝা যায় তিনি আসলে ধূমকেতু না নক্ষত্র ছিলেন। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো তরুণ থেকে মধ্যবয়সি বা বৃদ্ধ সবার মাঝেই এক গভীর স্পন্দন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শির্ষে।
হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত চলচ্চিত্র, গান ও উপন্যাস জনপ্রিয় হলেও টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাপেক্ষ্যা জনপ্রিয়। তার নির্মিত নাটকের মধ্যে ‘কোথাও কেউ নেই’ অন্যতম। নব্বই দশকের বাকের ভাই চরিত্রটি আজও দর্শকদের মুখে মুখে। এমনকি বাকের ভাইয়ের ফাঁসি বন্ধে দর্শকেরা তার বাড়িতে আক্রমণ করেছিলো।
এছাড়া তিনি বেশকিছু কবিতাও রচনা করেছেন। তার লেখা কবিতার মধ্যে ‘গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না’ অন্যতম।
এই জনপ্রিয় লেখক গানও রচনা করেছেন। তার গানের মধ্যে ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’ বা ‘আমার ভাঙ্গা ঘরে চান্দের আলো’ অন্যতম।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ সর্বমোট আটটি পুরস্কার।
বগুড়া জিলা স্কুল,ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৫৬৪ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তার প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে মুহসীন হলেই লেখা।
হুমায়ূন আহমেদ গাজীপুর জেলার পিরুজালি গ্রামে তার বাগানবাড়ি নুহাশপল্লী গড়ে তোলেন। বাড়িটির নামকরণ করা প্রথম পুত্র সন্তান নুহাশ হুমায়ুনের নামে। শেষ জীবনে তিনি এই বাড়িতে বসবাস করতে আগ্রহী ছিলেন। নিজেকে বিবরবাসী হিসেবে দাবী করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন মজলিশী। রসিকতা তিনি পছন্দ করলেও ভণিতা পছন্দ করতেন না। অন্যের স্বভাব-প্রকৃতি ও আচার-আচরন পর্যবেক্ষক করা ছিল তার শখ। বিপুল জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও অন্তরাল জীবন-যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন সবসময়েই। হুমায়ুন আহমেদ খুব ভোরে মাটিতে বসে লিখতে পছন্দ করতেন। লেখার সময় তার মনোযোগ এতো তীব্র থাকতো যে সে সময় অন্য কিছুই তার লেখায় সামান্য ব্যাঘাত ঘটাতে পারতো না।
হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম উপন্যাস হলো মধ্যাহ্ন, পোকা, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া,লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি।
তার নির্মিত ‘শ্যামল ছায়া’ এবং ‘ঘেটু পুত্র কমলা’ চলচ্চিত্র দুটি বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য দাখিল করা হয়েছিল।
২০১২ সালে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারি চিকিৎসার সময় তার দেহে ক্যান্সার ধরা পড়ে। কয়েক দফায় কেমোথেরাপি দেওয়ায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও শেষ মুহূর্তে অজ্ঞাত ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ায় তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। হুমায়ূন আহমেদ ১৯ শে জুলাই ২০১২ তারিখে নিউ ইউর্কের বেলেভু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে দাফন করা হয় নুহাশ পল্লিতে।
আজ অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করছি নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুুুুমায়ূন আহমেদ কে।