বরিশাল অফিস:- আড়িয়াল খাঁ নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে উদ্বোধনের আগেই হুমকির মুখে পরেছে নদী বেষ্টিত বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার রামারপোল এলাকার স্বপ্নের সেতু ও সংযোগ সড়ক।
সেতুটি মানুষ ও যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার আগেই নদী ভাঙনে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। ফলে জরুরি ভাবে নদীর ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা সেতু নির্মানে সরকারের খরচ হওয়া প্রায় ৭০ কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানাগেছে, ২০১৪ সালে সরকারের ‘সাউথ-ওয়েস্টার্ন রুরাল ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট’র আওতায় নদী বেষ্টিত মুলাদী উপজেলার সাথে সড়ক পথে দ্রæত যোগাযোগের জন্য উপজেলার রামারপোল এলাকা দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্বোধন করা হয়। প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন করেছে এবং এমএসটি-এমডিই-জেভি নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠান ৩.৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ করছে।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ৪৩২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৮২ মিটার প্রস্থ সেতুটিতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ২৪ ফুট। ১১২টি পাইলের ওপর ‘প্রি-স্টেসড কংক্রিট গার্ডার’ দিয়ে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। আটটি ১১২ মিটার ডায়ামিটার ও ৪৮ মিটার লম্বা কাস্ট ইন সিটু পাইলের এ সেতুটিতে পিলার রয়েছে ১২টি। এছাড়াও ১১.২৯১ মিটার উচ্চতার এবাটমেন্টের পাঁচটি স্প্যানের এ সেতুটি নির্মাণের জন্য জমি হুকুম দখল করা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বাটাজোর এলাকা থেকে মুলাদী উপজেলা হয়ে হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও কাজিরহাট থানার সাথে সড়ক যোগাযোগ আড়িয়াল খাঁ নদীর কারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে প্রায় আধা কিলোমিটার দৈর্ঘের মুলাদীবাসীর স্বপ্নের সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সেতুটি দিয়ে মুলাদী উপজেলার নাজিরপুরের সাথে মোল্লারহাট ও কুতুবপুরের সংযোগ সড়ক রয়েছে।
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোঃ হান্নান মাতুব্বর জানান, আড়িয়াল খাঁ সেতুটি নির্মাণের ফলে মুলাদী, হিজলা, কাজিরহাট থানাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার হাজার হাজার মানুষ সহজেই রাজধানী ঢাকার সাথে অনায়াসেই যোগাযোগ করতে পারবে। সেতুটি খুলে দেয়া হলে সড়ক পথে ঢাকাতে যাতায়াতের সময় কমবে প্রায় দুই ঘণ্টা। আড়িয়াল খাঁ নদীর অব্যাহত ভাঙনে মুলাদী-কালকিনি সংযোগ সেতুর নিচে ও এর আশপাশের এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে অচিরেই সেতুর সংযোগসড়ক ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এবং সেতুটি অকার্যকর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লিটন সিকদার জানান, নদী শাসন না করায় এবং অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে উদ্বোধনের আগেই সেতুটি অকার্যকর হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান জানান, সংযোগ সড়কের কাজ কিছুটা অসমাপ্ত থাকায় সেতুটি এখনও যান ও জনচলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়নি। নদী ভাঙনের হুমকির মুখে থাকা সেতুর সংযোগসড়ক রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।