কামরুল হাসান সোহাগঃ আজ শনিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৯০ তম জন্মবার্ষিকী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জাতির পিতার গ্রাম গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গমাতা মাত্র তিন বছর বয়সে তার বাবা শেখ জহুরুল ইসলাম এবং পাঁচ বছর বয়সে তার মা হোসনেয়ারা বেগমকে হারান। মাত্র ১৩ বছর বয়সে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
বিয়ের পর তিনি আর দশজন সাধারণ নারীর মতো স্বামীকে কাছে পাননি। বঙ্গবন্ধু তার জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে জেলে কাটিয়েছেন। বঙ্গমাতার  এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ ছিল না। বরং তিনি সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছায়ার মতো ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু কে কখনো সংসারের ঝামেলায় জড়াতেন না। সংসার, সন্তান সবকিছুই তিনি একা সামলাতেন।
বঙ্গমাতা তার সন্তানদের কখনো বাবার অভাব বুঝতে দেননি। তার সন্তানদের তিনি বোঝাতেন তার বাবা বাংলার মানুষের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছে। দেশের সবার জন্য তাকে ভাবতে হয়। তাই আর দশজন বাবার মতো সন্তানরা তাকে কাছে পাবে না। সংসারের হাল শক্ত হাতে ধরেছিলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
বঙ্গবন্ধু তার ‘কারাগারের রোজনামচা’য় সংসার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘রেণু বলল, ‘(সংসার নিয়ে) চিন্তা তোমার করতে হবে না।’ সত্যই আমি কোনোদিন চিন্তা করতাম না, সংসারের ধার আমি খুব কমই ধারি।’’ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটিও করেছিলেন বঙ্গমাতা। তিনি হাউস বিল্ডিংয়ের লোন নিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ৭’ই মার্চের ভাষন দেয়ার উদিশ্যে যাত্রাকালে গাড়িতে ওঠার পূর্বে বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতার পরামর্শ নেন। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধু কে বলেছিলেন, তার বিবেক যা বলে তাই করতে। বঙ্গবন্ধু সেটাই করেছিলেন। সৃষ্টি হয়েছিল ৭-ই মার্চের মহাকাব্যের।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর মতো অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও তার কোনো চাহিদা ছিল না। তিনি তখনো আর দশজন বাঙালি নারীর মতোই স্বামী-সন্তানদের জন্য নিজের হাতে রান্না করতেন। পোশাক, অলঙ্কার নিয়ে বিলাসিতা দূরের কথা, তিনি সাধারণ চাকচিক্যও পছন্দ করতেন না। তিনি গায়ে গহনাও পরতেন না।
তিনি শুধু জাতির জনকের সহধর্মিণী নন, জীবন সঙ্গিনীও। বঙ্গমাতা আজিবন তার স্বামীর আদর্শকে ধারন করে গেছেন।
আজ এই মহীয়সী নারি বঙ্গমাতার জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করছি।
লেখক : বিশেষ প্রতিবেদক, ডেইলি রাঙা প্রভাত।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সম্ভাবনার কলসকাঠী।
Share.
Exit mobile version