আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিত ও অছাত্র থাকায় দলীয় কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ছাত্রদলের সাধারন নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ রয়েছেন। দলীয় একাধিক সূত্রে জানাগেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ২০০২ সালের ১৭ এপ্রিল বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মনোয়ার হোসেন জিপু ও সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আকন বিপ্লবের উপস্থিতিতে আগৈলঝাড়া ডাকবাংলোতে সামছুল হক খোকনকে সভাপতি ও হেমায়েত তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ঠ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠণ করা হয়।

এ কমিটি গঠনের পর থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম কোন রকমে চললেও বর্তমানে উপজেলা ছাত্রদল একক ভাবে কোন কর্মসূচী পালন করছে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আকন কুদ্দুসুর রহমান গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরে। জহির উদ্দিন স্বপন গ্রুপের দলীয় কার্যক্রম না থাকায় ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা বিভক্ত হয়ে অন্য দুই গ্রুপে চলে যায়। উপজেলা ছাত্রদলের মধ্যে গ্রুপিং’র বিবাদ ৫টি ইউনিয়নেও রয়েছে। রাজনীতির মাঠ পর্যায়ে ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে ছাত্রদলের অগ্রণী ভূমিকা পালনের কথা থাকলেও আগৈলঝাড়ায় গ্রুপিং এর কারনে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচী পালন করছে না। দলের গঠনতন্ত্রে রয়েছে বিবাহিতরা ছাত্রদলের কোন গুরুত্বপূর্ন পদে থাকতে পারবেন না। বর্তমানে যারা উপজেলা পর্যায়ে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা সবাই বিবাহিত। বিবাহের পরে ওই সব নেতারা দলীয় কর্মসূচীতে সময় না দিয়ে ব্যবসা বানিজ্যে সময় দিচ্ছেন। এতে উপজেলা ছাত্রদলের রাজনীতি নেতৃত্ব বিহীনসহ দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিপুল সংখ্যক ছাত্র নেতা দীর্ঘদিন ধরে পদপ্রত্যাশী হয়ে দলীয় কর্মকান্ডে সক্রীয় ভূমিকা রাখলেও দীর্ঘ দিন যাবত কমিটি না হওয়ার ফলে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

এ কারনে সাধারণ ছাত্রদলের কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ছাত্রদলের মেয়াদউত্তীর্ণ বর্তমান কমিটির ছাত্র নেতারা নেতৃত্বে থাকার ফলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা তাদের উপর বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে ছাত্রদলের নেতাদের নেতৃত্বে আসতে বয়স সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে অনেক অবিবাহিত ছাত্রদের। দলের পদ প্রত্যাশী ত্যাগী অনেক ছাত্রনেতা তাদের কর্মীদের পিছনে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করছেন। শুধু তাই নয় পদ পাবার আসায় র্শীষ নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছে অনেক ছাত্রনেতারা। তৃণমূল ছাত্র নেতাকর্মীরা জানান, দলের ত্যাগী ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে যাদের সু-সম্পর্ক রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব দেওয়া হউক। বিবাহিতদের দিয়ে ছাত্রদলের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করায় তৃনমূলের নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডের উপর ক্ষুব্দ রয়েছে। ১৮ বছর ধরে আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি না হওয়ায় ছাত্রদলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে চলছে নানা গুঞ্জন। বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এখন নেতৃত্বহীন। আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র রাজনীতি ত্রি-ধারায় বিভক্ত হওয়ায় ছাত্র সংগঠনটির নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে কাউন্সিল করে কমিটি করার ঘোষণা দেয়া হলেও কারা ভোটার হবেন তা এখনও জানেন না অনেক নেতাকর্মীরা। উপজেলা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের দাবী খুব শীঘ্রই কাউন্সিলের মাধ্যমে উপজেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষনা করা হবে। নতুন কমিটি গঠনে বয়সসীমা নির্ধারণসহ আরও কয়েকটি ইস্যুতে চরম ক্ষুব্ধ সংগঠনটির অধিকাংশ নেতা। তারা ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেয়ার আগেই দলে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি চান। অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ছাত্রদলের নেতাদের দাবি একটি কমিটি গঠন করার। ছাত্রদলের কমিটি বাতিল করে যোগ্য, মেধাবী ও ত্যাগীদের সমন্বয়ে অবিলম্বে নতুন কমিটি গঠনের দাবী জানান উপজেলা ছাত্রদলের নতুন ছাত্ররাজনীতিবিদরা। একাধিক ছাত্রনেতারা বলেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোন কমিটি গুলোও সম্পন্ন করা হয়নি। অযোগ্য, অদ নেতৃত্বের কারণে ছাত্রদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে একই প্লাটফর্মে দাঁড় করানোও সম্ভব হয়নি। বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে ঐ কমিটির অনেকেই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ তৃণমূলের যে সকল নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে মামলা হামলা জেল-জুলুম-নির্যাতন-হ­য়রানীর শিকার হয়েছে, মারাত্মক আহতসহ বিভিন্ন ভাবে তিগ্রস্থ হয়েছে, তাদের খোঁজখবর কিংবা সামান্য সহানুভূতি প্রকাশ করেননি আগৈলঝাড়া-গৌরনদী তথা বরিশাল-১ আসনের শীর্ষ রাজনৈতিক ও দায়িত্বশীল অনেক নেতারা। যে কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এমন সংকীর্ণ মানসিকতার ব্যক্তিদের পে ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে নেতৃত্ব দেয়া কিংবা সংগঠিত করা আদৌ সম্ভব নয়। এছাড়া একাধিক পদ প্রত্যাশী ছাত্রদল নেতারা বলেন, কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় নেতারা যে যার মত করে একেকজন কেন্ডিডেট দাঁড় করাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকেই এলাকায় দীর্ঘদিনে আসেনি। অনেকে ঢাকায় বিভিন্ন চাকুরী ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। তারাও যদি কারো কারো নেতার প্রার্থী হয় তাহলে সেই সব নেতাদের বয়কট করা হবে। তৃনমূলের দাবী যারা প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এলাকায় দলের পাশে ছিল তাদেরই যেন পদ দেয়া হয়।

একাধিক ছাত্রনেতার নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, দায়িত্বশীলরা কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে ভুল বুঝিয়ে যোগ্য, মেধাবী, পরিশ্রমি ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাইনাস করে বির্তকিতদের দিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার অপচেষ্টা করলে যেকোন সময় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। তাছাড়া বিগত দিনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশের পরও যারা রাজপথের আন্দোলনে কোনো ভূমিকাই রাখেনি, তারা ছাত্রদলের দায়িত্বে থাকার কোন অধিকার নেই।

Share.
Exit mobile version