মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :- দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি পাড়ে শতবছর আগের গড়ে উঠা জনবসতিপুর্ণ ইসলামপুর ও কালিকৃষ্ণপুর এলাকা। দু’টি গ্রামের বাসিন্দারা বছরের ৬ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত থাকেন পানিবন্দী।এসময় হাওরের প্রবল ঢেউয়ে মারাত্মক বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। দরিদ্র গ্রামবাসী ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের পাশ দিয়ে একটি বেড়িবাধ নির্মাণের দাবী সরকারের কাছে।
হাওর পাড়ের শতবছরের এজনবসতিপুর্ণ ইসলামপুর গ্রামের একাংশ সিলেটের গোলাপগঞ্জের এবং বৃহদাংশ মৌলভীবাজারের বড়লেখার অর্ন্তগত। এ গ্রামের ৫-৬ হাজার মানুষ বছরে ৬ থেকে ৮ মাস থাকেন পানিবন্দী। হাকালুকির প্রবল ঢেউয়ে থাকেন চরম হুমকিতে। গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি হাওরের ঢেউয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দরিদ্র গ্রামবাসী কয়েক যুগ ধরে এ ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের পাশ দিয়ে একটি বেড়িবাধ নির্মাণের দাবী করে আসছেন। এতে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও ফসল রক্ষার সাথে হাকালুকির সৌন্দর্য পিপাসুদেরও যাতায়াত সুগম হবে। লেখাপড়ায় এগিয়ে যাবে স্কুল শিক্ষার্থীরা। পাল্টে যেতে পারে ইসলামপুর ও কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের চিত্র। পর্যটন খাতের নতুন দ্বার উন্মোচনও হতে পারে।
জানা গেছে, এশিয়ার অন্যতম ও সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত। বর্ষায় হাওরটি মিনি সমুদ্রে পরিণত হয়। এ হাওরের উত্তর-পশ্চিমাংশে বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের অবস্থান। ইসলামপুর গ্রামের একাংশ গোলাপগঞ্জ উপজেলারও অর্ন্তগত। প্রায় ১০০ বছর পূর্বে এখানে জনবসতি গড়ে উঠে। বছরের ৬ মাস থেকে ৮ পর্যন্ত এ দুই গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী থাকেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে, ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, ছিদ্দিক মিয়া, ছাদিকুর রহমান, সামছু মিয়া, ইব্রাহিম আলী, সামছুল ইসলাম, মো. গোলাম হোসেন, এরশাদ আলী, নুরুল ইসলাম, আলম চাদ, মতিন মিয়া জানান, হাওরের ঢেউয়ের কবল থেকে বসতঘর বাচাতে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে গার্ডওয়াল নির্মাণ করেন। কিন্তু ২/৩ বছরের মধ্যে ঢেউয়ের তোড়ে গার্ডওয়াল ভেঙ্গে যায়। অনেকেই সারা জীবণের রোজগারের টাকা খরচ করে গার্ডওয়াল দিয়ে এখন নিঃস্ব। হাকালুকির ঢেউয়ে শুধু বাড়িঘরই ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে তা নয়, এর সাথে বোরো ধানেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। ৪০-৫০ বছর পূর্ব থেকে এখানে একটি বেড়িবাধ নির্মাণের দাবী জানানো হলেও আজও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ভুক্তভোগীরা বলেন, গোলাপগঞ্জের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের বাড়ি হতে পূর্ব দিকে ইসলামপুর গ্রামের উমর আলীর বাড়ি হয়ে উত্তর দিকে হাজী ফজলু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাধ নির্মাণ করলে দুই উপজেলার দুইটি গ্রামের ৫ হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে।
এ গ্রামের প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রবাসের কয়েক বছরের সমুদয় রোজগার ও বাবা জমিজমা বিক্রি করে বসতঘর রক্ষায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে গার্ডওয়াল নির্মাণ করেছেন। কিন্তু ঢেউয়ের গতি একই তীব্র, আগামী ৩-৪ বছর গার্ডওয়ালটি টিকবে কি না এ নিয়ে ভীষণ চিন্তায় রয়েছেন। তিনি আরো জানান, সরকার যদি এখানে একটি বেড়িবাধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তবে গ্রামবাসী সেচ্ছায় তাদের ভুমি দান করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
সচেতন মহলের দাবি বেড়িবাধ নির্মাণ হলে হাকালুকি হাওরে পর্যটন খাতের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে এবং এলাকার ঘরবাড়ীসহ ডেউয়ের তান্ডব থেকে ফসলও রক্ষাপাবে।