বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে আগাম সবজি চাষে মুনাফার আশায় ব্যস্ততা বেড়েছে উত্তরের কৃষকদের। আবহাওয়া আর বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে জমি চাষ করে লাউ, করলা, বেগুন, কায়তাসহ বিভিন্ন শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

সরেজমিন ৮ সেপ্টম্বর মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সবজি চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ মৌসুমে চাষাবাদ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আবার ঝড় বৃষ্টি। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড় বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি চাষে প্রচুর খরচ হচ্ছে।
এরই মধ্যে কৃষকেরা সবজি লাগানোর জন্য একের পর এক জমি চাষ করে যাচ্ছেন। একটু খরা হলেই শুরু হয় জমি চাষের প্রক্রিয়া। বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে এভাবেই সবজি চাষ করার জন্য জমিকে উপযোগী করে তৈরি করছেন চাষিরা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক মাসের মধ্যেই ক্ষেত থেকে উঠবে আগাম শীতকালীন শাকসবজি।

বেশি লাভ ও বাম্পার ফলন হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন চাষি ও কৃষি বিভাগ ।

রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের সবজি চাষিরা জানান, এবারের ঝড়-বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে জমিতে বেশি হাল চাষ করতে হচ্ছে। একটু খরা হলে শুরু হয় চাষাবাদ। আবার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয়ে যায় ঝড় বৃষ্টি। আবার খরা হলে নতুন করে চাষ করতে হয়। এভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে তৈরি করতে হচ্ছে সবজি চাষের জমি। এরপর বিক্রি শেষে লভ্যাংশের হিসেব। তবে এবার লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন প্রান্তিক সবজি কৃষক রাসেল।
রাণীশংকৈল উপজেলার সবজি চাষি মতিউর রহমান বলেন, দুর্যোগ যখন আসে চতুর্দিক থেকেই আসে। একদিকে মহামারি করোনাভাইরাস অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আগাম সবজি চাষ করতে পারছি না আমরা। মহামারি করোনাভাইরাস থেকে জীবনকে বাঁচাতে যেভাবে যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমাদের। ঠিক সেভাবেই আগাম সবজি চাষ করার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-বৃষ্টি সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। করোনার কারণে অনেক জেলার বেকার যুবকরা চাকরির দিকে না ঝুঁকে নেমে পড়েছেন সবজি চাষে।

আবহাওয়া ভালো থাক আর না থাক তারপরও আগাম সবজি চাষ করতে পিছপা হননি সবজি চাষিরা। বর্তমানে বাজারে কম পাওয়া গেলেও মাসখানেকের মধ্যে সবজিতে ভরপুর হবে ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলো। দাম কিছুটা বেশি হলেও ভোক্তারা স্বাদ নেবেন শীতকালীন আগাম শাকসবজির।

রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের মোলান খুড়ি গ্রামের সবজি চাষি আব্দুল আলী বলেন, ঝড়-বৃষ্টির কারণে অনেকে সবজি চাষাবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। গতবারে যে চাষি ১০ বিঘা সবজি চাষ করেছিলেন এবারে তা কমে এসেছে ছয় থেকে সাত বিঘায়। টানা বৃষ্টির কারণে অনেকেই জমিতে পানি থাকার কারণে সবজি চাষ করতে পারেন না। এবার সবজি চাষে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দাম ভালো পাব বলে আশা করছি।

কৃষকেরা বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সবজির বাম্পার ফলন হবে। আমাদের উত্তরবঙ্গের মাটি বেশ উর্বর ও আঠাল তাই ফলন বেশি হচ্ছে। আর দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রির জন্য যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয়দেব নাথ বলেন, এবারে উপজেলায় বিপুলপরিমাণ সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। ৬০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৫৬ জন কৃষককে সরকারিভাবে সবজি বাগান করে দেওয়া হয়েছে। এবারে অন্যান্য সবজি ছাড়াও নতুন সবজি হিসেবে যোগ হয়েছে লতি কচু। প্রায় দেড় একর জমিতে এ চাষ হয়েছে। কৃষকদের লতিকচু চাষে বিঘাপ্রতি লতি পাবে ৩০ থেকে ৪০ মণ করে। লতি শেষে কচুতে লাভবান হবেন কৃষকরা।

Share.
Exit mobile version