শরৎ সন্ধ্যা
রোকসানা সিদ্দিক

তখন তপ্ত দুপুর,
নীলাকাশ জুড়ে শুভ্র মেঘ;
শরতের এমন এক দিনে তোমার-আমার
দেখা হওয়ার কথা একটি লেকের ধারে।
কথা হলো দূর চঞ্চল কাশবনে গিয়ে
এক বিকেলের গল্প হবো আমরা।
বিভাবতী স্বপ্ন মনে দোলা দিলো বাতাসে
দোল খাওয়া কাশফুলের মতো।
আমি একটু আগেই পৌঁছে গেলাম,
তাই অপেক্ষার সময়টা ছিলো বড্ড বেয়াড়া।
মুঠোফোনে ফোন দিয়ে অভিমানী সুরে বললাম,
তোমার দেরি থাকলে আমি গেলাম..!
ওপাশ থেকে বিনয়ী উত্তর এলো-
এইতো এসে পড়েছি, একটু দাঁড়াও!

অপেক্ষার পালা শেষে তৃষ্ণার্ত হৃদপিণ্ড
পিপাসিত করে অবশেষে তুমি এলে!
কালো প্যান্ট আর মেরুণ রঙের বাহারি শার্টে
বরাবরের মতোই তোমার সম্মোহনী সৌন্দর্যে
বিমোহিত হলাম!
আমিও ছিলাম কালো আর মেহেদী রঙের পোশাকে,
হাতে ছিলো মেরুন রঙের হাতব্যাগ।
একটা কালো স্তম্ভের সামনে আমার কতগুলো
ছবি তুলে দিয়ে বললে, এগুলো আমার!

সামান্য রোদ্দুরে কিছুদূর হেঁটে লেকের পানিতে
পা ভেজাতে চাইলাম।
পড়ে যাওয়ার আশংকায় তুমি পানিতে নামতে দিলে না।প্রকৃতির সব আয়োজন যেন একাকার হতে চললো সব হিসাব পুষিয়ে দেবার দাবিতে।
দৃষ্টির শোভানলে লেকের ওপারে ফুটে থাকা শরতের কাশফুলগুলি তখন আমাদের ভালোবাসার মতোই দুলছে।
প্রণয় লিপি পাঠ করছে নীড়ে ফেরা পাখির মোহনীয় ঠোঁট।
সন্ধ্যা রাগের রক্তিম আভায় বর্নিল ভালোবাসায় কেটে গেলো আমাদের অনতি সন্ধিক্ষণ!
হৃদয়ের জলরঙে এঁকে নিলে প্রেয়সীর মুখ,
পরাণে বুনে দিলে প্রজাপতির সুখ।
ঝরে পড়লো জলের জমিনে ভালোবাসার অমিয়ধারা।

স্মৃতি ধরে রাখতে মুঠোফোনে তোমার অসাধারণ কিছু ছবি তুলে সাজিয়ে দিলাম জীবনের নকশা!
নিরব সৌন্দর্য লেপ্টে গেলো সূর্যাস্তের বিদায়ী ক্ষণে।
সন্ধ্যার পর লেকের ধারে থাকা বারণ ;
তাই স্বপ্নের বিভাবনের ঘোর কাটিয়ে
আমাদের বাড়ি ফিরতে হলো শরৎ সন্ধ্যায়।

শেষ পাণ্ডুলিপি

রোকসানা সিদ্দিক

অস্পষ্ট, শীর্ণ অক্ষরগুলিতে
জমেছিলো একগোছা ঝুল!
ওগুলো ঝাড়ামোছা করতে
ঢের সময় লেগেছিলো!

একটু একটু করে সাজিয়ে
তৈরি করা হয়েছিল কতগুলো
এলোমেলো অগোছালো শব্দে লেখা
বিষাদগাঁথা কাব্য!
তাতে প্রাণসঞ্চার করেছিলে তুমি;
জেগে উঠেছিলো একেকটি শব্দ ;
পরিপূর্ণ ছিলো কবিতার যৌবন!
একটা দু’টো এভাবে পুরো পান্ডুলিপি!

কবিতার জন্মলগ্নে সেখানে খেলেছিল,
শান্ত নদীর জলে ভেজা কিছু বালিহাঁস,
ফুলের সুবাসে জুটেছিলো কিছু
রঙিন প্রজাপতি ;
বয়ে গিয়েছিলো প্রকৃতির কানে কানে
বলে যাওয়া কিছু মৃদু বাতাস!

হঠাৎ সোঁ সোঁ হাওয়ার শব্দ,
অতঃপর ঝড়ের তান্ডবলীলা!
শব্দগুলো লণ্ডভণ্ড হলো বিবর্ণরূপে;
ধর্ষিত হলো পুরো পাণ্ডুলিপি!

বিস্তৃত স্মৃতির মতো ছিড়ে গেলো
কবিতার দেহ;
প্রাচীন উম্মাদনা আর নেই,
করপল্লবে ছিলো শুধু নোনা স্বাদ!

ধুলিমাখা প্রচ্ছদের অক্ষরগুলিতে আবারও
হাত বুলিয়ে প্রাণ জাগাবার বৃথা চেষ্টা!

 

নিজস্ব নিয়ম

রোকসানা সিদ্দিক

এখন আমি আমার সকল কিছু-
সাজাবো নিজস্ব নিয়মে;
দু’হাতে জ্বেলে দেবো সান্ধ্য প্রদীপ!

এখন আমি আমার সখের বাগানটায়
নানা জাতের গাছ লাগাবো;
সকাল-সন্ধ্যা-রাতে তাদের সুগন্ধি শুঁকে
মন মাতাবো!

এখন আমি আমার নিজের জন্য
কালো মেঘহীন আলাদা একটা
আকাশ চাইবো;
যেখানে- ঝরঝর বারি ঝরবে,
ধু্ঁয়ে দেবে সকল মন খারাপের
নষ্ট পঁচা পত্রমর্মর!

এখন আমি আমার দাবার চাল
বুঝেশুনে চালবো;
চোখ রাখবো প্রতিপক্ষের মন্ত্রীর চালে।
চেনা অচেনার দূর্বোদ্ধোতা এড়িয়ে
এখন আমি নিজের জন্য কিছু চাইবো।

এখন আমি আমার হেঁটে যাওয়া
পথে ফু দিয়ে চলবো।
অচেনা পথের ধুলো-রাশিতে অকারণে
আর পা ভেজাবো না।

Share.
Exit mobile version