রাঙা প্রভাত ডেস্কঃ বিয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ শুক্রবার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমান এই আদেশ দেন।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম শরীফ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আসামি সাদিয়াকে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিপক্ষে আইনজীবী জুলহাস উদ্দিন আহম্মেদ সবুজ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।

শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন খারিজ করে দুদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর নাজির উদ্দিন নামের একজন ভুক্তভোগী গুলশান থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার পর অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সাদিয়াকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, তিনটি মেমোরি কার্ড, সাতটি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়।

‘প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন’

আজ দুপুরে সাদিয়া জান্নাত সম্পর্কে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার।

এতে বলা হয়, ‘সাদিয়া জান্নাতের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি হলেও তাঁর কথাবার্তা কিংবা চাল-চলনে বোঝা যায় না, তিনি কানাডা প্রবাসী নয়। আর এটাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জনকে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন ৩০ কোটিরও বেশি টাকা।’

ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘গত ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন সাদিয়া জান্নাত। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি সন্তানহীন সাদিয়া জান্নাত। বয়স ৩৭, উচ্চতা ৫.৩ ইঞ্চি। নামাজি সাদিয়া জান্নাতের ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই। যোগাযোগের ঠিকানা বারিধারা। সেখানে একটি মোবাইল ফোন নম্বরও দেওয়া ছিল। ওই মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে একপর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশান-১ থাই সিগনেচার রেস্টুরেন্টে নাজির হোসেন দেখা করেন সাদিয়া জান্নাতের সঙ্গে। সে সময় সাদিয়া নাজিরকে জানান, বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবেন এবং সেখানে তাঁর ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করতে হবে। জান্নাতুলের এসব কথায় বিশ্বাস করেন ভুক্তভোগী। পরে প্রাথমিকভাবে দেড় লাখ টাকা ও পাসপোর্ট জমা দেন নাজির। তারপর প্রতারক জান্নাতুল নাজিরকে জানান, কানাডায় প্রচণ্ড শীত তাই সেখান থেকে তার ২০০ কোটি টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসবেন। পরে দেশেই ব্যবসা করবেন। এবং নাজির সেই ব্যবসা দেখাশোনা করবেন।’

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘ডিএইচএলের মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে ট্যাক্স/ভ্যাট/ডিএইচএল বিল বাবদ মোট এক কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন সাদিয়া জান্নাত। পরে নাজির অভিযোগ জানান সিআইডিতে। গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন নথি দেখে ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে।

ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, এভাবে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া। তার একটি হিসাবের খাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার হিসাব আমরা পেয়েছি। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আমরা সেগুলোতে এক কোটি টাকা পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়ে গেলে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখতেন। এই চক্রের সঙ্গে আরো যারা জড়িত আছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Share.
Exit mobile version