স্বাধীনতা চাই
আহমেদ আল আমীন
মনের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে
বলতে হলে
মুখের কথা বুক উঁচিয়ে
বলতে হলে
সুখের স্বপন বুকটা ভরে
দেখতে হলে
আপন নীড়ে সন্ধ্যা বেলা
ফিরতে হলে
চাঁদের সাথে সারাটি রাত
জাগতে হলে
প্রিয়ের চোখে নিজ চোখটি
রাখতে হলে
স্বাধীনতা চাই।
সুজন মাঝির সুরেলা গান
গাইতে গেলে
দেশের কথা দশের কাছে
বলতে গেলে
সত্য বলার সাহস বুকে
রাখতে গেলে
অবুঝ মনের সবুজ কথা
কইতে গেলে
সাদা কাপড় নিজ বদনে
পরতে গেলে
স্বাধীনতার অধিকারটুকু
চাইতে গেলে
বাঁচার উপায় নাই।
____
তোমার ছবি এঁকে
আহমেদ আল আমীন
কত বসন্ত কাটিয়েছি একা
একা বিষন্নতা নিয়ে,
তোমার জন্য সাজিয়েছি পথ
ফুলেল পাপড়ি দিয়ে।
কত ফুল ছড়িয়েছি আমি
কাঁটা ছড়ানো পথে,
তবুও তোমার নূপুর চরণ
দেয়নি সেথায় পাতে।
কত দুপুর কাটিয়েছি আমি
প্রখর রুদ্র তাপে,
বিকেল কাটিয়েছি একা বসে
মস্ত বড়ো ঐ শিপে।
কত সন্ধ্যে তুলেছি রজনীগন্ধা
তোমায় দেবো বলে,
চাঁদটা ছুঁয়েছি আলতো করে
তোমার মুখটি ভুলে।
কত রাত্রি কাটিয়েছি আমি
জ্যোৎস্নার আলো দেখে,
চাঁদের গায়ে রং তুলি ছাড়া
তোমার ছবি এঁকে।
___
কড়ি ডোর
আহমেদ আল আমীন
স্বপ্নের দিন
কেটে দুর্দিন
আসবেই আবার।
এই ক্ষণে’তে
মন ভুলা’তে
স্বপ্ন ফিরে পাবার।
এই বেলাতে
অবহেলাতে
ভাসছি শুধু তোমার।
চেনা সে অল্পতে
রোদেলা গল্পতে
কড়ি ডোর অপেক্ষার।
____
এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি
আহমেদ আল আমীন
এই কিছু দিন আগে
তুমি ছিলে শুকতারা হয়ে আমার মনের শুভ্র আকাশে।
আমি তোমাকে ছুঁতে গিয়েও ছুঁইনি,
হয়তো লোক লজ্জার ভয়ে আর না হয় বামুন হয়ে চাঁদে হাত না দেওয়ার ছলে।
তারপর
তুমি আমার রাতের আকাশে মিটিমিটি তারা হয়ে হাসতে শুরু করলে,
আমিও তোমায় দেখে দেখে জাগতে শুরু করলাম।
আবেগের বসে হাতটি ছুটে গেলো তোমায় ছুঁতে,
পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম এটা শুধুই কল্পনা!
হাসতে শুরু করলাম পাগলের মতো ব্যর্থতা শিকারে।
অতঃপর
তুমি বৃষ্টি হয়ে এসে আমার গা ভিজয়ে দিলে,
স্পর্শ করলে আমার দেহের প্রতিটি লোমহর্ষক যায়গায়।
আমি উপভোগ করলাম!
এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।
ভালোবাসার এক স্বর্গপুরীতে আবিষ্কার করলাম দু’জন দু’জনাকে।
আর এখন
হাজার মাইলের পথ একসাথে চলাচলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে দুজনেই বসে আছি বটতলায়।
দু’জনই খুব ক্লান্ত!
আমার মনে উঁকি দিচ্ছে একটি বিষয়,
ক্লান্তি শেষের রাস্তাটাও যদি দু’জনার একটাই হয়।
___
. নিয়তি
আহমেদ আল আমীন
ঐ পাড়ার এক চাষি ছেলে মহেশ রায় নাম,
সারাটা দিন ব্যস্ত কাজে ঝরায় মাথার ঘাম।
সম্পদ মানে ছিলো তার জমি বিঘে তিন,
হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ে উড়ায় চালের টিন।
অসহায় হয়ে বাবুর কাছে ঋণ আনিতে যায়,
বলে, মহাজন তুমি ছাড়া আমার নাই উপায়।
আরজি শুনে বাবু মশাই কহিলেন হেসে,
ঋণ দিবো, তবে এর দিগুণ দিবে বছর শেষে।
উপায় না পেয়ে মহেশ তখন রাজি হয়ে যায়,
জমির কাগজ বন্ধক রাখে জামানতের দায়।
টাকা পেয়ে খুশি মনে ফিরে মহেশ বাড়ি,
ঘরের জন্য টিন কিনে ছেলের জন্য মুড়ি।
বাকি টাকা খরচ করে করিতে জমি চাষ,
সুখে আছে মহেশ চাষি যাচ্ছে কেটে মাস।
বর্ষা এলো বৃষ্টির জল ঝরছে, দিনে এবং রাতে
নদীর পানি উঠে পৌঁছায় মহেশ রায়ের ক্ষেতে।
বন্যা থাকলো দিন কুড়ি, চারপাশে হাহাকার,
কারোর ঘরেই রইলো না বাকি একমুঠ খাবার।
সবাই গিয়ে জড়ো হলো বাবু মশাইয়ের দরজায়,
বলে সবাই,খাবার চাই মহাশয় আমরা যে অসহায়।
বাবু বলিলেন, কোথায় আবুল বের করো এদের,
বছর পুরতে বাকি নেই দিন দেয়নি টাকা সুদের।
শুনিয়া সবাই বলে মহাশয়, দেন বছর আরো-এক
সবাই মিলে মিটাবো দেনা গোছাবো সবার দুখ।
বাবু বলেন, আর নেই সুযোগ এক্ষুনি শোধকর দেনা,
জমির কাগজ এক করো আবুল আর দেরি সয় না।
দাঁড়িয়ে আছে অসহায় সবাই বাবুর কাণ্ড দেখে,
দেনার দায়ে ভিটে-বাড়ি হারিয়ে পাথর সবাই শোকে।
এই সমাজের বাবুরা আর কতকাল করবে রাজ?
কবে হবে তারা মানুষ? কবে গড়বে সুষ্ঠু সমাজ।