শাহজাহান সরকার,বিশেষ প্রতিবেদক।। দেশের পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় কৃষকের ঘরে অন্তত ৮৯ হাজার টন পেঁয়াজ মজুত আছে। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ঘরে থাকা পেঁয়াজ বাজারে আনতে শুরু করেছেন। এতে তিন উপজেলায় গত দুই-তিন দিন পেঁয়াজের দাম ছিল কিছুটা পড়তির দিকে।
শনিবার তিন উপজেলা বিভিন্ন হাটে পাইকারি ৭৫–৮৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও আজ তা কেজিতে ৫–১০টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। পাবনার কাশিনাথপুরে প্রতিমন পেঁয়াজ ২৭ শত থেকে ২৯ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্য বছরগুলোতে ব্যবসায়ীরা প্রচুর পেঁয়াজ মজুত করে রাখলেও এবার তেমনটি খুব একটা হয়নি। বরং এবার কৃষকেরাই পেঁয়াজ মজুত রেখেছেন বেশি।
এ বিষয়ে সাঁথিয়ার করমজা হাটের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের আড়তের মালিক মুন্নাফ প্রামাণিক বলেন, এবার পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমে প্রতিমণ পেঁয়াজের দাম ছিল ১৪০০–১৮০০ টাকা। এত দামে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুতে উৎসাহিত হননি। তাই ব্যবসায়ীদের ঘরে এবার পেঁয়াজের মজুত খুবই কম। অন্যদিকে এনজিওগুলো কৃষকদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন কিস্তি আদায় করতে পারেনি। এই সুযোগে অনেক কৃষক পেঁয়াজ রেখে দিয়েছিলেন। এতে দাম বাড়ার সুফল কৃষকের ঘরেই যাচ্ছে।
বেড়ার সানিলা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, তারাপুর গ্রামের আলী আকবর, সাঁথিয়ার মহিষাকোলা গ্রামের নূর ইসলামসহ অন্যান্য বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, পেঁয়াজ চাষ করে এর বিগত কয়েক বছর তাঁরা টানা লোকসানে পরেছেন। গতবার থেকে তাঁরা লাভের মুখ দেখছেন। তবে গতবার অনেকেই পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমেই বেশির ভাগ পেঁয়াজ বিক্রি করে অল্প লাভ পেয়েছেন। কিন্তু এবার তাঁরা সাধ্যমতো পেঁয়াজ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

কৃষি কার্যালয় সূত্রগুলো জানায়, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হলো সুজানগর। এর পরেই সাঁথিয়ার অবস্থান। সুজানগরে এবার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়ে প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার টন উৎপাদিত হয়েছে। সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। আর বেড়ায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে প্রায় ৫৬ হাজার ২০০ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে।

তিন উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের মতে, অন্য বছরের তুলনায় এবার কৃষকের ঘরে মজুত পেঁয়াজের পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। চলতি বছরের পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমের (মার্চ-এপ্রিল) পর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে কৃষকের ঘরের পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনো তিন উপজেলায় অন্তত ৯৯ হাজার টন পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে মজুত রয়েছে। এর মধ্যে সুজানগরে ৪০ হাজার, সাঁথিয়ায় ৩৮ হাজার ও বেড়ায় ১১ হাজার টন মজুত রয়েছে। এছাড়া গত বছর মজুত পেঁয়াজ পঁচন ধরে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো বেশিরভাগ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার পেঁয়াজ ওঠার মৌসুম, অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলে কৃষকেরা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন কম। তা ছাড়া সে সময় হাটে ব্যাপারীদের উপস্থিতি যেমন কম ছিল, তেমনি কৃষকেরাও পেঁয়াজ নিয়ে খুব একটা হাটে যাননি। তাই সব মিলিয়ে কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের একটা বড় অংশ এখনো মজুত আছে।
গত দুই- তিনদিন বিভিন্ন হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে অন্যান্য দিনের তুলনায় পেঁয়াজের আমদানি বেড়েছে। ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা জানান, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবরে কৃষকেরা হাটে পেঁয়াজ আনতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া হাটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পেঁয়াজ কিনতে প্রচুর ব্যবসায়ীর উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে। গতকাল পাইকারি ৭৫–৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অথচ আগে এসব হাটে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০–৮৮ টাকায়।

সাঁথিয়ার করমজা হাটের পেঁয়াজের আড়ত মুন্নাফ ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মো. আলম বলেন, ‘গতকালের (মঙ্গলবার) তুলনায় আজ পেঁয়াজের দাম পড়তির দিকে। দাম বাড়ার খবরে কৃষকেরা হাটে বেশি বেশি পেঁয়াজ নিয়ে আসছেন। এভাবে পেঁয়াজের আমদানি বাড়তে থাকলে দাম আরও কমবে বলে আমাদের ধারণা।

Share.
Exit mobile version