অনলাইন ডেস্কঃআর মাত্র কয়েক বছরের অপেক্ষা। তারপরেই চাঁদের বুকে পা রাখবেন প্রথম কোনো নারী। চাঁদে প্রথম পদার্পণের ৫৫ বছর পর অর্থাৎ ২০২৪ সালে আবারও চাঁদের মাটিতে হাঁটবেন দু’জন মানুষ। একজন নারী ও একজন পুরুষ মহাকাশচারী চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখবেন।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রিডেনস্টাইন সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘোষণা দিয়েছেন। ১৯৬৯ সালে প্রথম সভ্যতার পায়ের ছাপ পড়েছিল চাঁদের বুকে। হেঁটেছিলেন তিন মার্কিন মহাকাশচারী।

দু’-এক কদম এগনোর পর চাঁদের মাটি থেকেই নিল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, একজন মানুষের এই ছোট একটা পদক্ষেপই গোটা মানবসভ্যতার বিরাট উল্লম্ফন।

ব্রিডেনস্টাইন জানিয়েছেন, ৫৫ বছর আগে নিল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স আর এডুইন অলড্রিনের মতো খুব অল্প সময়ের জন্য এবার চাঁদের বুকে পা পড়বে না মানুষের। এবার টানা সাত দিন ধরে চাঁদের মাটিতে হাঁটাহাঁটি, নুড়ি-পাথর কুড়োনো ও নানা ধরনের গবেষণা চালাবেন দুই মহাকাশচারী।

আর এক দশকের মধ্যেই লাল গ্রহ মঙ্গলের বুকে মানুষের পদার্পণের জন্য জরুরি প্রাথমিক গবেষণা ও প্রস্তুতি শুরু হবে চাঁদের মাটিতে এবারের পদার্পণের পরেই। এরপর মহাকাশযানে চেপে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন দুই মহাকাশচারী।

চাঁদে পদার্পণের জন্য কোন দুই মহাকাশচারীকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি নাসা। শুধু তাদের আসন্ন চন্দ্রাভিযান ‘আর্টেমিস মিশন’-এর প্রথম পর্যায়ের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।

পৃথিবী থেকে চাঁদে যেতে আর্মস্ট্রংদের লেগেছিল তিন দিন। প্রযুক্তি এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। তাই এবার আড়াই দিনেই পা ছোঁয়ানো যাবে চাঁদের মাটিতে।

নাসার প্রশাসনিক প্রধান ব্রিডেনস্টাইন বলেছেন, ‘আমাদের আসন্ন আর্টেমিস মিশন নিয়ে কংগ্রেসের দুই কক্ষেরই সার্বিক অনুমোদন আমরা পেয়ে গেছি। চাঁদ আবারও আমেরিকার নাগালে পৌঁছাতে চলছে এই একুশ শতকেই।

তিনি বলেন, এবার আমরা চাঁদে যাচ্ছি বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, পৃথিবীতে তাদের অর্থনৈতিক সুফল পাওয়ার লক্ষ্যে। এভাবে পরবর্তী প্রজন্মকেও আমরা অনুপ্রাণিত করতে চাইছি। চাইছি লাল গ্রহে মানুষের প্রথম পদার্পণের জন্য প্রয়োজনীয় চাঁদে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণার গতি বাড়াতে।’

নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৫৫ বছর পর চাঁদে দ্বিতীয়বার মানুষের পদার্পণের জন্য নাসার অত্যন্ত শক্তিশালী ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস)’ ও মহাকাশযান ‘ওরিয়ন’ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওরিয়নের চারটি ইঞ্জিনকে পরীক্ষা করে দেখার কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী মাসেই ওই ইঞ্জিনগুলোর ‘হট ফায়ার টেস্ট’ হবে।

হট ফায়ার টেস্টের পরেই ওরিয়ন মহাকাশযানের ‘কোর স্টেজ’টি (ভিতরের অংশ) পাঠানো হবে ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। একে মহাকাশযানের মূল অংশের সঙ্গে জোড়া লাগানো হবে।

এরপর এসএলএস এবং ওরিয়নকে পরীক্ষামূলক ভাবে একই সঙ্গে পাঠানো হবে চাঁদের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করতে। মহাকাশচারীদের জন্য লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে কি না, সেটাও অন্যতম লক্ষ্য হবে সেসব পরীক্ষানিরীক্ষার।

এটাই আর্টেমিস মিশনের একেবারে প্রাথমিক ধাপ। ‘আর্টেমিস-১’ চাঁদের কক্ষপথে পাঠানো হবে আগামী বছর। সেই অভিযানে কোনও মহাকাশচারী থাকবেন না। তার দু’বছর পর অর্থা ২০২৩ সালে হবে ‘আর্টেমিস-২’ মিশন। মহাকাশযানে থাকবেন একজন মহাকাশচারী। তবে তিনি মহাকাশযান থেকে বের হবেন না।

ব্রিডেনস্টাইন জানিয়েছেন, আর্টেমিস-২ অভিযানে চাঁদের কক্ষপথে এসএলএস রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওরিয়ন মহাকাশযানটি চালাবেন একজন পাইলট মহাকাশচারী।

পরবর্তী আর্টেমিস-৩ অভিযানে হবে ওরিয়ন মহাকাশযান থেকে চাঁদের মাটিতে নামার পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে ২০২১ থেকেই বছরে দু’বার করে চাঁদের কক্ষপথে থাকা মহাকাশযানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠাতে শুরু করবে নাসা।

আর আর্টেমিস-৪ অভিযান থেকে চাঁদের কক্ষপথে একটা স্থায়ী আস্তানা গড়ে তুলবে নাসা। এখনকার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মতো। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন রয়েছে পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৭০ কিলোমিটার উপরে। আর আর্টেমিসের ওই আস্তানা থাকবে আড়াই লাখ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে থাকা চাঁদের কক্ষপথে। সেটাই হবে চাঁদে নাসার ‘বেস ক্যাম্প’।

Share.
Exit mobile version