রাঙা প্রভাত ডেস্ক:- সংসার চালাতে কিছুদিন আগেও রাজধানীর উত্তরায় একটি বাড়িতে সিকি’উরিটি গার্ডের চাকরি করছিলেন মোশারফ হোসেন। তার স্ত্রী মাহফুজা খাতুন এলাকার অনেকের বাড়িতে করেছেন বুয়ার কাজ। আর বাবা-মায়ের ক’ষ্টে উপার্জিত টাকায় পড়াশোনা করে বড় ছেলে গোলাম রসুল সুইট এখন সহকারী জজ।

সম্প্রতি সহকারী জজ হিসেবে পিরোজপুর জে’লায় যোগদান করবেন গোলাম রসুল। এবং এ সংক্রান্ত গেজেটে তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে ৬৭তম হয়েছেন তিনি। গোলাম রসুলের বাড়ি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজে’লার পারুলিয়া ইউপির কোমরপুর গ্রামে। পরিবারের অ’ভাব-অনটন থাকায় ঠিকমতো খেতে না পারলেও তিনি এখন জজ। গোলাম রসুল বলেন, শাখরা কোমরপুর সরকারি বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শে’ষ করে ভোমরা ইউপির দাখিল মা’দরাসা থেকে দাখিল পাস করি।
এরপর দেবহাটা উপজে’লার সখিপুর খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। পরিবারে তখন খুব অভাব। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিন চলতো।
জজ সুইট বলেন, এইচএসসি পাসের পর পড়ালেখা অ’নিশ্চিত হয়ে পড়ে। ঠিক সে সময় সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। সেখানে এক ভাই আমাকে ঢাকায় গিয়ে কোচিং করার পরামর্শ দেন।

কিন্তু পরিবারের সেই অবস্থা ছিল না। মায়ের একটি গরু ছিল। সেই গরুটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২০১০ সালের ১৭ মে ঢাকা যাই। এরপর একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। তিনি বলেন, কিছুদিন পর মায়ের গরু বিক্রি করা সেই টাকাও ফুরিয়ে যায়।

বাড়িতেও টাকা চাওয়া বা পরিবারের দেয়ার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। কোচিং পরিচালকের সামনে কান্নাকাটি করেছি। এরপর তিনি আমাকে বিনামূল্যে কোচিং ও থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এরইমধ্যে সঙ্গে থাকা সহপাঠীদের বন্ধু হয়ে যাই আমি।

বন্ধুরাও আমার পারিবারিক অবস্থা জানার পর আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে থাকেন। বন্ধুদের সহযোগিতার কথাগুলো ভু’লে যাওয়ার নয়। মা-বাবা মাঝে মধ্যে এক বা দুই হাজার করে টাকা দিতেন। গত এক মাস আগে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। সিকি’উরিটি গার্ডের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছেন। মাকেও এক বছর আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করা ব’ন্ধ করে দিয়েছি।

গোলাম রসুল বলেন, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আ’ইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ হয়। বন্ধু ও শুভাকঙ্খীদের পরামর্শে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হই।

ভর্তির পর টিউশনির পোস্টার ছাপিয়ে অবিভাবকদের কাছে বিতরণ শুরু করি। এভাবে পাঁচটি টিউশনি জোগাড় হয়। এভাবেই আমার শিক্ষাজীবন চলে। তিনি আরো বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ফলাফলে বি-ইউনিটে মেধা তালিকায় ১১তম হয়েছি।

১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে ১০০ জনের মধ্যে হয়েছি ৬৭তম। এর মধ্যে নিয়োগ হয়েছে ৯৭ জনের। তিনজন পু’লিশ ভেরিফিকেশনে বা’দ পড়েছেন। পিরোজপুর জে’লার সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করবো জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বড় লোক হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। সব সময় ন্যায়ের পথে থেকে মানুষদের জন্য কাজ করবো।

কখনো অ’নিয়ম বা দু’র্নীতির সঙ্গে জ’ড়িত হবো না। যখন চাকরিজীবন শে’ষ করবো তখন যেন অ’বৈধ উপায়ে উপার্জনের একটি টাকাও আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে না থাকে। আমার কাছে সব মানুষ ন্যায়বি’চার পাবে। অ’সহায় মানুষরাও এর থেকে বঞ্চিত হবে না।

Share.
Exit mobile version