বিশেষ প্রতিনিধি।। দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার ৭ অক্টোবর ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীদের বিগত দুটি বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই এইচএসসির রেজাল্ট দেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর অনেক পরীক্ষার্থী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পরীক্ষার্থীদের অনেকে বলছেন, দীর্ঘ ছয় মাস স্থগিত থাকার পর অবশেষে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসায় পরীক্ষার্থীরা অনেকটা ভারমুক্ত হবেন। এখন তারা নিজেদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে পারবেন।
আবার অনেক পরীক্ষার্থী বলছেন, পরীক্ষা ছাড়া কেবলমাত্র পূর্ববর্তী বোর্ড পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে রেজাল্ট দেয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর ফল খারাপ হবে। কারণ অনেকেই জেএসসি-এসএসসিতে ভালো ফল করতে না পারলেও উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে ভাল ফল করেন।
এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইলে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা মারজান বিনতে মুরাদ জানান, এপ্রিল মাসে আমাদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। তবে পরীক্ষা নেয়ে কোনো ঘোষণা না আসায় দমবন্ধ করা একটা পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম এতদিন। এখন অনেক ভালো লাগছে। কারণ আমার জেএসসি এবং এইচএসসির রেজাল্ট ভালো। তবে আমার অনেক বন্ধুর রেজাল্ট খারাপ, তাই তাদের জন্য খারাপ লাগছে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া মোমেন আলী বিজ্ঞান স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মারুফা আকতার মিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম। তবে শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণায় আমি মর্মাহত হয়েছি। কেননা আমার জেএসসির ফল ভালো হলেও এসএসসির ফল খারাপ। পরিবারের ইচ্ছা ছিল আমাকে মেডিকেলে পড়াবে। তবে মেডিকেলে পড়তে গেলে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার গড় দেখা হয়। এক্ষেত্রে আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে।
বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা রাফসান রাফাত বলেন, আমার জন্য ভালোই হয়েছে। পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর পড়ালেখা ছেড়েই দিয়েছিলাম। পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ায় আমার এইচএসসির রেজাল্টও ভালো হবে। তবে আমার এমন অনেক বন্ধু আছে যাদের জেএসসি-এসএসসির রেজাল্ট ভালো না। তবে তারা উচ্চমাধ্যমিকে ক্লাসে খুব ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছে। পরীক্ষা হলে তারা ভালো ঢল করতে পারত।
একই কলেজের আরেক পরীক্ষার্থী শাহরিয়ার রেজা শাওন বলেন, পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন হওয়াটা এবারই প্রথম। এইচএসসির ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। পরীক্ষা না হওয়ায় এটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হবে। অনেক পরীক্ষার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন ভঙ্গ হবে।
তথ্যমতে, এবারের এইচএসসি ও সমানের পরীক্ষায় প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। তাদের মধ্যে বিগত এইচএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন। আর দুই বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ২২৪ জন। এক বিষয়েও পাশ করতে পারেননি এমন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৪১ জন।’
এর আগে শনিবার দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় এখন এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হবে। সে মোতাবেক জেএসসি-এসএসসির রেজাল্ট অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হবে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এভাবে মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি থাকবে। তারা এ বিষয়ে তাদের মতামত দেবেন। সে অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশ করা হবে।