বিশেষ প্রতিনিধি।। বাজারের নাম ‘বউবাজার’। সেখানকার বেশিরভাগ দোকানি নারী। এ কারণেই এটি বউবাজার নামে পরিচিত। তবে কেউ শখের বসে নয়, দোকানে বসেছেন পেটের তাগিদে।

দুই যুগ আগে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর বাঁকে বাজারটি মিলেছে। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুর্গম চরমোন্তাজ ইউনিয়নে এর অবস্থান। সরেজমিন দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের দুই সারিতে হরেকরকম পণ্যের অর্ধশত দোকান।

নিত্যপ্রয়োজনীয় সবই পাওয়া যায় দোকানগুলোতে। প্রায় সব দোকানেই নারী বিক্রেতা। তবে ক্রেতা নারী-পুরুষ সবাই। নারী দোকানিরা জানান, শুরুতে অনেকে তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছিল। তবুও তারা থেমে থাকেনি।

আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। এ উপলক্ষে মঙ্গল ও বুধবার বউবাজার ঘুরেছেন যুগান্তরের এ প্রতিবেদক। শুনেছেন নারী দোকানিদের জীবন-সংগ্রামের গল্প। তাদের কারও স্বামী, কারও ছেলে, কারও বাবা নদী বা সাগরের জেলে। অর্থাৎ সংসারের উপার্জনক্ষম মানুষ মৎস্য পেশার ওপর নির্ভরশীল।

একসময় মাছ পেলে ওই জেলে পরিবারগুলোর সংসারে রসাই (রান্নাবান্না) চলত, আর না পেলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটত। কিন্তু এভাবে আর কত কাল? পুরুষের পাশাপাশি সংসারের খরচ জোগান দিতে অবশেষে গৃহিণীরা দোকান দিয়ে বসেছেন।

তাদেরই একজন পারভীন বেগম (৩৫)। বউবাজারের চায়ের দোকানি। সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়। পারভীন বেগম বলেন, ‘দুই ছেলে নদীতে মাছ ধরে।

আমিও আগে মাছ ধরতাম। কিন্তু এখন মাছ ধরে সংসার চলে না। এজন্য দোকান দিছি। নদীতে মাছ না পরলেও আমাগো পেটে দুইটা ভাত জোটে।’ আরেক দোকানি ছালমা আক্তারের (২৮) সঙ্গে দেখা। চায়ের চুমুকে চুমুকে তার জীবন-গল্প শোনা। ছালমা বলেন, ‘জামাই (স্বামী) সাগরে মাছ ধরে। হের একার আয়ে সংসার চলে না

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তাসলিমা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, ‘চরাঞ্চলের নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তারাও পারে সংসারের রোজগারের সদস্য হতে।

চরমোন্তাজের বউবাজারের গল্প শুনে, আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছে। সংগ্রামী এই নারীদের জন্য আমাদের সেবার দরজা খোলা।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘নারীদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। বউবাজারের ভাঙন রোধের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদেরকে অবহিত করব। তাদের জন্য কিছু করতে পারলে আমাদের কাছেও ভালো লাগবে।’

Share.
Exit mobile version