শাহজাহান সরকার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।। পাবনার ঈশ্বরদীর রুপপুরের পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক অতিক্রম করলো রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম ও একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (আরপিভি) ও স্টিম জেনারেটর ইতিমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব যন্ত্রাংশবাহী জাহাজটি মঙ্গলবার ২০ অক্টোবর নোঙ্গর করেছে মংলা সমুদ্র বন্দরে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার ২০ অক্টোবর বিকেলে রাশিয়ার পাঠানো ঐ জাহাজটি বিকেল ৪টায় মংলা বন্দরের বহিরনঙরে পৌঁছায়।
সূত্র বলছে, পরমাণু প্রকল্পের যন্ত্রগুলো নিয়ে জাহাজটি রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসতে ১৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছে। বিশেষ এসব ইক্যুপমেন্ট রাশিয়ান ফেডারেশনের সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় বিশেষ বার্জে স্থানান্তর করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৫ নভেম্বর মংলা বন্দর থেকে রূপপুরের উদ্দেশে এটি যাত্রা শুরু করবে। এবং প্রকল্পের নদী বন্দরে নোঙ্গর ফেলতে পারে ২১ নভেম্বর।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশনায় এ প্রকল্পের অগ্রগতিতে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল এবং স্টিম জেনারেটরের চালান দেশে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প আরো একটি মাইল ফলক অর্জন করলো। এর মাধ্যমে বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বাস্তবে রূপ নেয়ার পথে এগিয়ে গেল। তাঁর মতে এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশ পৌঁছাবে অনন্য এক উচ্চতায়।
প্রকল্প পরিচালক পরমাণু বিজ্ঞানী ড. শৌকত আকবর জানান তারা সময়মতো প্রকল্পের সব কাজ শেষ করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। নতুন বছরের শুরুর দিকেই যন্ত্রগুলো রূপপুরের ভৌত কাঠামোর মধ্য স্থাপন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন এগুলো চূড়ান্তভাবে স্থাপন করার কাজ শুরুর বিষয়ে সব প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। রাশিয়ার বড় অঙ্কের ঋণ ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দেশের প্রথম কোন পারমাণবিক প্রকল্প। যা আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এখান থেকে দুটি ইউনিটে উৎপাদিত হবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব পরমাণু সংস্থা রোসাটমের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে ভিভিইআর-১২০০ টাইপের রিয়্যাক্টর। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ‘থ্রি-প্লাস (৩+’ জেনারেশন শ্রেণিভুক্ত। এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও চুল্লি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চালু থাকবে।এইকেন্দ্রটির মূল যন্ত্রাংশগুলো রাশিয়ার বিভিন্ন কারখানায় প্রস্তুত করে, সমুদ্র পথে এসব বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। জানা গেছে, এসব যন্ত্র নির্মাণ করা হয়েছে রাশিয়ার বৃহত্তম নিউক্লিয়ার শিল্প এলাকা ভোলগাদোনস্কে। এখানকার কারখানা থেকে প্রথমে বিশেষ যানে করে এগুলো পৌঁছানো হয় সিমলিয়ান্সক জলাধারের একটি জেটিতে। সেখান থেকে নভোরোসিয়েস্ক হয়ে কৃষ্ণসাগর ও সুয়েজ ক্যানেল পাড়ি দিয়ে জাহাজ এসেছে বাংলাদেশে।
প্রকল্প সূত্র বলছে, চুল্লি পাত্রটির ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন এবং স্টিম জেনারেটরের ওজন ৩৪০ টন। দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের জন্য রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান জেএসসি অটোমেনারগোম্যাশ ১৪ ধরনের সরঞ্জাম প্রস্তুত করবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে – চুল্লিপাত্র, স্টিম জেনারেটরের যন্ত্রাংশ, প্রধান সঞ্চালন পাইপলাইন, প্রধান সঞ্চালন পাম্প, চাপ কমানো যন্ত্র, জরুরী শীতলীকরণ ব্যবস্থা, নিস্ক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়াও টারবাইন হলের জন্য উচ্চচাপ তৈরির হিটার (হাই প্রেসার হিটার), ভ্যাকিউম, কনডেনসেট ও ফিড পাম্প ও টারবাইন ইউনিট পুনরায় গরম করার যস্ত্র প্রস্তুত করবে তারা।
ধারণা করা হচ্ছে সব যন্ত্রগুলো ২০২২ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে চলে আসবে। সরকারের আশা দেশের অন্যতম এই মেগাপ্রকল্পটি নির্দিষ্টসময়েই উৎপাদনে আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে রুপপুরের পরমাণু কেন্দ্রটিতে প্রথম ইউনিট চালু হবে ২০২৩ এবং দ্বিতীয়টি চালু হবে ২০২৪ সালে।