সোনামনির যত্ন
আপনি হয়তো কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। আপনার পাশে বসে ছোট বাচ্চাটা খুব দুষ্টুমি করছে। বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দিলেন।
নগরায়ন ও শিল্পায়নের এই যুগে এসে আমরা সবাই ব্যবস্ত হয়ে পড়ছি। অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণে অনেক বাবা-মা’ই শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না। নিজেদের অনুপস্থিতির সময়টাতে শিশুকে শান্ত রাখতে তাই অনেকেই মোবাইল ফোনের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন।
কিন্তু ডাক্তারি গবেষণা মতে, স্মার্টফোনের অতি ব্যবহারে শিশুর মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুর চিন্তা ও কল্পণাশক্তি ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের রঙিন পর্দার গণ্ডিতে আটকা পড়ে যায়। ক্রমান্বয়ে মাদকাসক্তির মতই শিশুরা আক্রান্ত হয়ে পড়ে “স্মার্টফোন আসক্তি”-তে। এরই ধারাবাহিকতায় দেখা দেয় বিভিন্ন ধরণের মানসিক বৈকল্য। এমনকি চিকিৎসকরা এও জানাচ্ছেন যে, স্মার্টফোন আসক্তির কারণে শিশুর শুধুমাত্র মানসিক বিকাশই যে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, বরং তারা শারীরিকভাবেও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।
১. স্মার্টফোন তথা ইন্টারনেট আসক্তি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দেয়। শিশুর ধৈর্য্য ও মনোযোগ কমিয়ে দেয়। ফলে শিশু ধীরে ধীরে অসহিষ্ণু, অসামাজিক ও উচ্ছৃংখল হয়ে পড়ে। তার সহজাত সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
২. অনেক সময় ধরে ফোন ব্যবহারের কারণে শিশুরা পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়। এতে তারা “মনোযোগের ঘাটতিজনিত চঞ্চলতা” বা “অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার আ্যক্টিভিটি ডিসর্ডার” নামক জটিলতায় ভোগে।
৩. স্মার্টফোনের মাধ্যমে শিশুরা অপ্রাপ্ত বয়সেই না বুঝে বিভিন্ন অনৈতিক ও আপত্তিকর বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হয়। সহজেই এই্ বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়াতে তারা এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছে। এ কারণে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট আসক্ত শিশু ও তরুণদের মাঝে নৈতিকতার অভাব ও মূল্যবোধের অবক্ষয় অপেক্ষাকৃতভাবে প্রবল বলে গবেষকদের ধারণা।
৪. অতিরিক্ত সময় ধরে ফোনের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে শিশুদের বিভিন্ন ধরণের চোখের সমস্যা দেখা দেয়।
৫. শিশুরা বেশিরভাগ সময়ই শুয়ে বা বসে ফোন ব্যবহার করে। আর স্মার্টফোন আসক্ত শিশুরা ঘরের বাইরে খেলাধুলাতেও আগ্রহী হয় না। ফলে শৈশবকালীন অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধির হার তাদের মাঝে খুবই বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, পরবর্তীতে এসব শিশুর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা যেমন: হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
প্রতিকারের উপায়:
১. শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিন।
২. শিশুকে খেলাধুলা ও বিভিন্ন সামাজিক কাজে উৎসাহিত করুন।
৩. প্রয়োজন ছাড়া শিশুর কাছে ফোন না রাখার চেষ্টা করুন।
৪. আপনার শিশু কোন কোন ওয়েবসাইট পরিদর্শন করছে তা খেয়াল রাখুন।
৫. বিভিন্ন ফিল্টারিং সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। ক্ষতিকর ও আপত্তিজনক ওয়েবসাইট ফায়ারওয়াল প্রোটেকশন দিয়ে বন্ধ রাখুন।
৬. সন্তানকে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ চর্চায় উদ্বুদ্ধ করুন এবং ইন্টারনেট এর খারাপ দিক সম্পর্কে সচেতন করুন।
তথ্যসংগ্রহঃ শাহজাহান সরকার।