আবার ও দাম বাড়ল ভোজ্য তেলের

শাহজাহান সরকার,বিশেষ প্রতিনিধি।  সপ্তাহ পার না হতেই ভোজ্য তেলের বাজার আরো চড়েছে। আগের বাড়তি দামের সঙ্গে চলতি সপ্তাহে যোগ হয়েছে প্রতি কেজিতে তিন থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে চলতি মাসে দ্বিতীয় দফা এবং গত তিন মাসে ষষ্ঠবারের মতো দাম বাড়ল।

খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা। আর বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। পাম তেলের দামও বেড়েছে কেজিতে ছয় থেকে সাত টাকা। এর আগে চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝিতে মিলমালিকরা ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেন।

ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা বলছেন, করোনার কারণে সয়াবিন ও পামের খামারগুলোতে শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় কাঁচামালের সরবরাহ কম। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোজ্য তেলের বর্তমান দাম ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া এক বছর আগের তুলনায় ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, সেগুনবাগিচা, মালিবাগসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বড় দোকানগুলোতে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। বাজার ও

 পাড়া-মহল্লার ছোট দোকানগুলোতে রাখা হচ্ছে ১১৫ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে যা ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে ছিল। নিম্ন আয়ের মানুষ যে পাম তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে, তার দামও কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়ে এখন ১০২ থেকে ১০৭ টাকা কেজি।

বিভিন্ন ব্র্যান্ড কম্পানিগুলো তাদের বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ছয় থেকে সাত টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। সে অনুসারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের এক লিটার বোতলের দাম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। গত সপ্তাহে যা ছিল ১১৪ থেকে ১১৮ টাকা। চলতি মাসের শুরুতে বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১১০ থেকে ১১৪ টাকা লিটার।

গত বছর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিনের গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ৮৭ টাকা ৯১ পয়সা। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ টাকা ৭০ পয়সা। গত জানুয়ারিতে খুচরা বাজারে দাম ছিল প্রতি কেজি ৯৮ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, এখনো সব জায়গায় নতুন দামের তেল আসেনি। ফলে আগের তেলই বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে নির্ধারিত দাম অনুসারে পাঁচ লিটার জারের দাম পড়বে ৫৭০ থেকে ৬০০ টাকা। প্রতি জারে ৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

জানতে চাইলে মালয়েশিয়ান পাম ওয়েল কাউন্সিলের রিজিওনাল ম্যানেজার এ কে এম ফখরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তির দিকে। ফলে দেশের বাজারেও বাড়ছে। সয়াবিনের দাম বাড়তে থাকায় পাম তেলের চাহিদাও বেড়ে গেছে।’ তিনি বলছেন, পামের খামারগুলোতে শ্রমিক সংকটে বীজ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। ফলে পামের সরবরাহ কমে গেছে। একদিকে চাহিদা বৃদ্ধি, অন্যদিকে সরবরাহ কম; দুই মিলে তেলের বাজার চড়া।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী মো. গোলাম রাব্বানী জানান, এখন মিলগেট থেকেই ন্যূনতম ১০৬ টাকা কেজি দরে সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে। তাঁরা এখন সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ১০৮ থেকে ১০৯ টাকা কেজি। সুপার পাম তেল মৌলভীবাজারে ৯৮ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, গত তিন সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম প্রতি কেজিতে ১২ টাকা বেড়েছে।

বাজারের এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরাসরি তেল আমদানির পরিবর্তে বীজ আমদানি করা উচিত। কারণ বীজ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট লাগছে না। ফলে প্রতি ১০০ টাকায় ১৫ টাকা এখানেই কমে যাবে। এতে কম দামে তেল বিক্রি করতে পারবেন মিলমালিকরা।

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, তেল আমদানিতে তিন ধাপে ভ্যাট দিতে হয়। এটি পরিহার করে শুধু আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিলে দাম কম রাখা সম্ভব।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশ প্রতিবছর ২.২ থেকে ২.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়। দেশে তেলের চাহিদা ২.২ মিলিয়ন টন। মোট আমদানির মধ্যে সয়াবিনের পরিমাণ ০.৭ থেকে ০.৮ মিলিয়ন টন এবং পাম তেল ১.৪ থেকে ১.৬ মিলিয়ন টন। আর বাকিটা সরিষা, সূর্যমুখী, ধানের তুষ থেকে তৈরি এবং অন্যান্য ভোজ্য তেল।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এমপিওসি সূত্রে মতে, বর্তমানে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম এক হাজার ৯০ ডলারের ওপরে। আর পাম তেলের দাম ৮৬০ ডলারের ওপরে।

বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম-দরের ওয়েব পোর্টাল মুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর-নভেম্বরের সময়কালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম প্রতিটন ৯১৪ থেকে ৯২০ মার্কিন ডলার ছিল। তার আগে এপ্রিল-মে মাসে ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ ডলার। অক্টোবরে পাম তেলের দাম প্রতিটন ৮২০ ডলারে ওঠে, যা এপ্রিল মাসে ৫৮০ থেকে ৬০০ ডলার ছিল।

Share.
Exit mobile version