রাঙা প্রভাত ডেস্কঃ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ‘সায়েন্স’, ‘কমার্স’ ও ‘আটর্স’ বিভাজন থাকবে না। উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের কাঙ্খিত ‘বিষয়’ শিক্ষার্থীদের পড়ার ক্ষেত্র থাকবে উন্মুক্ত। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ‘প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা’য় এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ রূপরেখায় শিক্ষার পাঁচটি ধাপ উল্লেখ করা হয়েছে। ধাপগুলো হচ্ছে- এক. প্রস্তুতি শিক্ষা ‘প্রাক-প্রাথমিক’; দুই. ভিত্তি শিক্ষা ‘প্রাথমিক’; তিন. সামাজিকীকরণ শিক্ষা ‘মাধ্যমিক’; চার. বিশেষায়ণের জন প্রস্তুতি ‘উচ্চমাধ্যমিক’ এবং পাঁচ. বিশেষায়ণ ‘উচ্চশিক্ষা’।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণিতে ‘সায়েন্স’, ‘কমার্স’ ও ‘আটর্স’ বিভাগ বিভাজন থাকবে না। তবে এরা (শিক্ষার্থীরা) ‘বিজ্ঞান’, ‘ব্যবসা’ এবং ‘মানবিক’-এর বিষয়গুলো পড়তে পারবে। আগের মতো গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত করব না। শিক্ষার্থীরা আবশ্যিক তিনটি বিষয় নেওয়ার পর নৈর্বাচনিক এবং ঐচ্ছিক হিসেবে যে কোনো ‘বিষয়’ নির্বাচন করতে পারবে। এতে সে কি বিজ্ঞান, ব্যবসা কিংবা মানবিক বিভাগের ‘বিষয়’ পড়বেন, সেই পথ উন্মুক্ত থাকবে। উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের লক্ষ্যেও ‘বিষয়’ নির্বাচন করে পড়তে পারবেন শিক্ষার্থী। উচ্চ মাধ্যমিক ও তৎপরবর্তী সময়ে সে বিশেষায়িত ক্ষেত্রে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে পেশাগত প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।

পাঠ্যক্রমে উচ্চশিক্ষার এমন রূপরেখা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কায়কোবাদ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, পাঠ্যক্রম পরিমার্জন একটি বড় পরিবর্তন। এটি করার আগে সরকার বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে নিশ্চয় আলোচনা-পরামর্শ করেই এ পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে দক্ষতা তৈরির দিকে।

তিনি বলেন, এখন মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের ছেলেমেয়েরা যে পদার্থ, রসায়ন, উচ্চতর গণিত বিষয়ে পড়ালেখা করে আসে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে তাদের দক্ষতা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট না। ‘সায়েন্স’, ‘কমার্স’ ও ‘আটর্স’ বিভাজন থাক বা না থাক কারিকুলামে যেই পরিমার্জন হোক, সেটিতে যেন দক্ষতাকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমাদের দরকার ছেলেমেয়েরা কোন ‘বিষয়ে’ কতটা জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছে।

কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান জানান, প্রচলিত শিক্ষায় মাধ্যমিক স্তরের শেষ পর্যায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি। এই স্তরের শিক্ষার্থীর বয়স সাধারণত ১৬ থেকে ১৮ বছর। শিক্ষার্থীর জীবনে এ দুটি বছর অন্তর্বর্তীকাল হিসেবে বিবেচিত। কারণ এই পর্যায় শেষে কোনো কোনো শিক্ষার্থী স্নাতক বা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়, আবার একটি বড় অংশ কর্মজগতে প্রবেশ করে। তাই যারা স্নাতক স্তর কিংবা কর্মজগতে প্রবেশ করবে, তাদের জন্য এ স্তরের শিক্ষাক্রম এমনভাবে বিন্যস্ত করা হবে, যেন তাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি উচ্চশিক্ষা এবং ভবিষ্যৎ কর্মজগতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। তিনি বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিখনের সার্বিক উদ্দেশ্য বিশেষায়নের জন্য প্রস্তুতি। তাই নৈর্বাচনিক বিশেষায়িত বিষয়গুলোর জন্য এই স্তরে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

শিক্ষার্থী তার আগ্রহ, সামর্থ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি বিশেষায়িত বিষয় নির্বাচন করতে পারবে। জীবন ও জীবিকা শিখনক্ষেত্রের আলোকে শিক্ষার্থীরা যেন আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ হয়, তার জন্য পেশাদারি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রায়োগিক বিষয়গুলো নির্বাচন করা যাবে। নির্বাচিত প্রায়োগিক বিষয়গুলো থেকে ঐচ্ছিক হিসেবে যে কোনো একটি বিষয় নেওয়া যাবে।

এনসিটিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে একাধিক শিখনক্ষেত্রের ভিত্তিতে নির্ধারিত ২-৩টি বিষয়, যা সব শিক্ষার্থীর জন্য আবশ্যিক হবে। প্রচলিত সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার নৈর্বাচনিক ও আবশ্যিক বিষয়গুলো উন্মুক্ত রেখে বা প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বিষয়গুচ্ছ নির্বাচন করা যেতে পারে। নির্বাচিত বিষয়গুচ্ছ থেকে এক শিক্ষার্থীকে তার আগ্রহ ও ক্যারিয়ারের পরিকল্পনা অনুযায়ী যে কোনো তিনটি বিষয় নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। পেশাদারি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নির্ধারিত বিষয় থেকে শিক্ষার্থীকে তার আগ্রহ ও ক্যারিয়ারের পরিকল্পনা অনুযায়ী যে কোনো একটি বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষাক্রম রূপরেখায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়গুলোর জন্য মোট শিখন সময়ের ২৫ শতাংশ সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নৈর্বাচনিক ৩টি বিশেষায়িত বিষয়ের জন্য মোট শিখন সময়ের ৭৫ শতাংশ সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া একটি ঐচ্ছিক প্রায়োগিক বিষয়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আলাদা করে সময় বরাদ্দ করবে।

উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত এই কারিকুলাম অনুযায়ী মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীই সব ধরনের বিষয় নিয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়বে। এই স্তরের শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকের মতো আলাদা বিভাগ থাকবে না।

Share.
Exit mobile version