রাঙা প্রভাত ডেস্কঃ  রাজধানীর মিরপুরে সানমুন নামে ১১ বছর বয়সী একটি শিশুকে অপহরণ করে সে দিনই হত্যার পর শিশুটির অভিভাবকের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় পাঁচ লাখ টাকা। এ কাণ্ডের মূল হোতা ওই শিশুটিরই আপন চাচা মাহফুজুর রহমান রনি (৩৮)। তার তিন মাসের পরিকল্পনা শেষে গত বৃহস্পতিবার অপহরণ করা হয় জন্মসূত্রে ইতালির নাগরিক সানমুনকে। এ কাণ্ডে পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী সানমুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে নাটের গুরু রনি এখনো পলাতক আছেন।

সানমুনকে অপহরণ করার পর রনিকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহত শিশুটির মা রোকসানা পারভীন রুপা। গত শনিবার মধ্যরাতে মিরপুর মডেল থানায় এ মামলা করার পর প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে শিশুটির ফুপাতো ভাই নূর আলম প্রলয় (২০), প্রলয়ের বন্ধু ইউসুফ নেওয়াজ (২২), খায়রুল ইসলাম (২০) ও ইয়াসিন আফাত কবির মামলাটির আসামি। এ ছাড়া আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সবাই প্রলয়ের বন্ধু। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপহরণের দুদিন পর গত শনিবার সকালে মিরপুর শাহআলী প্লাজার ১৪ তলার ছাদসংলগ্ন সিঁড়ি থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারকালে সানমুনের গলায় ওড়না প্যাঁচানো ছিল।

সানমুনের চাচা রনির সঙ্গে ওর মা রুপার বাড়ি ও সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। রুপা জানান, বিষয়টি নিয়ে মাঝে-মধ্যে হুমকি-ধমকিও দিত ভবঘুরে রনি। তার অভিযোগ, সানমুনকে হত্যা করে সম্পত্তি ভোগের পরিকল্পনা ছিল রনির।

মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার সানমুনকে অপহরণ করার পর সে দিনই সন্ধ্যায় ওর মা রুপা থানায় অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ। অন্যদিকে অপহরণের নাটক সাজায় সানমুনের চাচা রনি ও ফুপাতো ভাই প্রলয়। রাতে রুপার মোবাইল ফোনে কল করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয় একটি নম্বর থেকে। কিন্তু কল করার পর থেকে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন রাতে এ কা-ে জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন শনিবার সকাল ৯টার দিকে সানমুনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ওসি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে, সানমুনকে অপহরণ করে শাহআলী মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সে দিনই সন্ধ্যায় শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা। এর সঙ্গে রনিও জড়িত। গত তিন মাস ধরে সানমুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। কেন, কী কারণে এ নির্মম হত্যাকা– তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে পারিবারিক ও আর্থিকসহ বেশ কয়েকটি কারণকে সামনে রেখে তদন্ত চলছে, জানান ওসি মোস্তাজিরুর রহমান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সানমুন মিরপুর বাংলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। থাকত মিরপুর ৬ নম্বরের এ ব্লকে মায়ের সঙ্গে। সানমুনের জন্মের দুবছর পর ওর বাবা আনোয়ার হোসেন মারা যান। বছর দুই আগে সানমুনকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ওর মা রুপা। গত ১৭ ডিসেম্বর বিকালে সানমুন কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে মার্কেটে খেলছিল। সে সময় সানমুনকে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে চাচার নবজাতক সন্তানকে দেখাতে নিয়ে যায় ওর ফুফাতো ভাই প্রলয়। সেখান থেকেই তাকে অপহরণের পর শাহ আলী মার্কেটে নিয়ে হত্যা করা হয়। এর পর তার মুক্তিপণ বাবদ ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয় এবং এ নিয়ে চলে দর কষাকষি।

গত শুক্রবার দুপুরে দুপক্ষের মধ্যে মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। অপহরণকারীরা একবার জানায়, মোহাম্মদপুরে টাকার লেনদেন হবে। পরে আবার জানায়, সেখানে নয়, মিরপুর ১০ নম্বরে টাকা দিতে হবে। এর পর সন্ধ্যায় অপহরণকারীরা জানায়, তারা হাতে হাতে টাকা নেবে না, বিকাশে নেবে। পরে তিনটি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে মোট ৬০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাঠানোর পরপরই তারা নম্বর বন্ধ করে দেয়। তবে শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশ বিকাশের সূত্র ধরেই দুজনকে গ্রেপ্তার করে। সানমুনের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলেও জানান তিনি।

সানমুনের বাবা প্রদীপ বলেন, আমার ছেলের গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার খুনিদেরও সেভাবেই ফাঁসি চাই। খুনিরা আমার ভাই হোক, ভাগনে হোক আর যে-ই হোক-আমি তাদের ফাঁসি চাই।

Share.
Exit mobile version