অবিক্রিত ৪ লাখ টন চাষিদের কাছে মজুত

রাঙা প্রভাত ডেস্কঃ দেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। এবার লবণ চাষের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে প্রান্তিক চাষিদের কাছে এখনো গত বছরের প্রায় ৪ লাখ মেট্রিকটন লবণ মজুত রয়েছে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লবণ বিক্রি করেননি তারা। ফলে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে এবারও চাষিদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা বিরাজ করছে।

চাষিরা জানান, প্রতি কেজি লবেণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৭-৮ টাকা। কিন্তু কেজি ৫ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগী ও আমদানি করা সোডিয়াম সালফেট ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারে বিক্রি হওয়ায় দেশে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য মিলছে না বলে তাদের অভিযোগ।

দেশের কক্সবাজার, টেকনাফ, পেকুয়া, মহেষখালী, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় লবণের চাষ হয়ে থাকে। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষাবাদ হয়। এই লবণ চাষের সঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার চাষি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাদের জীবিকার প্রধান উৎস লবণ চাষ। এসব চাষি লোকসান হলেও বংশানুক্রমে লবণ আবাদে জড়িত রয়েছেন। চাষিরা জানান, লবণ উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জমির খাজনা, শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম বাড়ছে না।

বিসিক জানায়, লবণচাষিদের প্রেরণা দিতে তাদের নানা কর্মসূচি রয়েছে। এবার করোনার কারণে লবণচাষিদের প্রণোদনা প্রদানের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের ডিজিএম হাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে জানান, চাষিদের কাছে গত বছরের প্রায় ৪ লাখ মেট্রিকটন লবণ অবিক্রিত অবস্থায় মজুত রয়েছে। লোকসানের কারণে তারা বিক্রি করেননি। এবার প্রথম দফায় ১ হাজার ৬০০ চাষিকে ৫ শতাংশ সরল সুদে ১ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। ছয় মাসের মধ্যে তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করবেন।

জানা যায়, দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে এবার ১৯ লাখ মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে মোট উৎপাদিত লবণের মধ্যে ভোজ্য লবণের চাহিদা প্রায় ১০ লাখ টন, শিল্পের চাহিদা ৩ লাখ ৭৮ হাজার টন, প্রাণিসম্পদ খাতে ২ লাখ ২৩ হাজার টন এবং মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণে দশমিক শূন্য ১ টন লবণের চাহিদা রয়েছে। তবে লবণ মিল মালিকদের তথ্যমতে, দেশে বছরে লবণের মোট চাহিদা প্রায় ২০ লাখ মেট্রিকটন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও শিল্প বিকাশের কারণে লবণের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মতে, ভোজ্য লবণের চাহিদা ৯ লাখ টন আর শিল্পসহ অন্যান্য খাতে লবণের চাহিদা ১১ লাখ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ লবণ চাষি কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস ইত্তেফাককে বলেন, চাষিদের প্রতি কেজি লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৭-৮ টাকা। কিন্তু কেজি ৫ টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। তাই লোকসানের কারণে অনেক চাষি লবণ মজুত করে রেখেছেন। শিল্পে ব্যবহারের নামে আমদানি করা সোডিয়াম সালফেট দেশের বাজারে সোডিয়াম ক্লোরাইড মিশ্রিত করে ভোজ্য লবণ হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে। তারা দামও কম রাখছে। ফলে দেশীয় লবণচাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

লবণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশে বছরে সোডিয়াম সালফেটের চাহিদা ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টন। অথচ বছরে প্রায় ৫ লাখ টনের বেশি সোডিয়াম সালফেট আমদানি হচ্ছে। এতে জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে এবং দেশীয় লবণশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Share.
Exit mobile version