শাহজাহান সরকার,বিশেষ প্রতিনিধি।। পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে।
সামাজিক অবক্ষয়, অবসাদ ও দুশ্চিন্তাসহ বিভিন্ন কারণে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ক্রমেই বেড়ে চলেছে রোগীর সংখ্যা। তবে জনবল সংকটে রোগীদের সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মানসিক রোগী বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর দুই মাসে শুধু বহির্বিভাগেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ২৭০ জন রোগীর।

এ ছাড়া ইনডোরে বর্তমানে ভর্তি হয়েছেন ২৪৮ জন। যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতালে ৩০ জন চিকিৎসক পদের মধ্যে ১৭ জনের পদই শূন্য। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), অ্যানেসথেটিস্ট, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট, বায়োক্যামিস্ট, ডেন্টাল সার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে হাসপাতালটির কার্যক্রম।

সীমিত চিকিৎসক ও জনবল দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। জানা যায়, হাসপাতালটির জন্য ৩০ জন চিকিৎসকসহ মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৬৪৩। বর্তমানে ১৩ জন চিকিৎসকসহ কর্মরত আছেন ৪৫৩ জন এবং শূন্য রয়েছে ১৯০টি পদ। জনবলের অভাবে ধুকছে হাসপাতালটি।

আবার ৫০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২০০ শয্যার হাসপাতালের সমান জনবল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, জরুরিভিত্তিতে সিনিয়র কনসালটেন্ট, ক্লিনিক্যাল সাইক্রিয়াটিস্ট, মেডিকেল অফিসার নিয়োগ করা না হলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েও দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ফিরে যেতে পারছেন না প্রায় ২১ জন রোগী। তাদের কারও ঠিকানা ভুল, আবার কোনো অভিভাবক বা পরিবার রোগীকে বাড়ি নিতে রাজি নয় বলে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। এসব রোগী নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পড়েছেন মহাবিপাকে।
এদের চিকিৎসা খরচ মেটানো, শয্যা খালি না করার কারণে ওই শয্যায় নতুন রোগীও ভর্তি করা যাচ্ছে না। অপরদিকে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানান, অন্যান্য রোগীর মধ্যে থাকার কারণে এবং হতাশাগ্রস্ত বেশির ভাগ রোগীই মানসিকভাবে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার পুরনো রোগীরা ঘুরে-ফিরে আবার ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালটিতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর সেখানে পরিবার থেকে প্রয়োনীয় যত্ন ও ভালোবাসা না পাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত খাবার ও ওষুধ না খাওয়ার জন্য সুস্থ হয়েও রোগীরা আবার হাসপাতালে ফিরে আসছেন।   হাসপাতালের পরিসংখ্যান শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালের বহির্বিভাগে গত ১০ বছরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ লাখেরও বেশি, যার মধ্যে নারী-পুরুষ রোগীর সংখ্যা প্রায় সমান।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ টি এম মোর্শেদ বলেন, হাসাপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় শয্যা সংখ্যা কম। চিকিৎসক ও লোকবল সংকট তো রয়েছেই। অন্য হাসপাতালের রোগীরা বাইরের খাবার খেতে পারে, এখানে তা সম্ভব নয়, শুধু তাই নয়, খাওয়া-দাওয়া, চুল, হাত-পায়ের নখ কাটা থেকে শুরু করে সবই করতে হয়। লোকবল নিয়ে আমরা খুবই বিপাকে রয়েছি। গত জুনে এখানে আউটসোর্সিংয়ে ১১৯ জন লোক থাকলেও এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ৪৫ জনে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এ হাসপাতালে উন্নত সেবা প্রদানের চেষ্টা থাকে। তবে রোগীর চাপে আমরা অসহায়। প্রতি মাসে বহির্বিভাগে রোগীদের যে সেবা দেওয়া হচ্ছে তা গত ৫ বছর আগেও ছিল মাত্র দেড়-দুই হাজার। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রোগীও বাড়ছে। পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত কারণে অবসাদ, দুশ্চিন্তাসহ বিভিন্ন কারণে রোগী বৃদ্ধি হচ্ছে।

Share.
Exit mobile version