মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস, গৌরনদীঃ অনেকদিন পরে গ্রামের এক রাস্তা দিয়ে যখন হেটে যাচ্ছিলাম। দেখতে পেলাম তিন ছোট ডানপিটে বালকদের দুরন্তপনা। দেখলাম বালকেরা হাতে গুলতি ও মার্বেল নিয়ে এদিক-ওদিক বড় বড় চোখে তাকিয়ে গাছের ডালের দিকে পাখিদের আনা-গোনা দেখছে। ওদের এসব দৃশ্য দেখে স্মৃতিতে অামার মনে পরে যায় সেই কৈশোর বয়সের নানা রঙ্গের দিনগুলি। অামাদের সেই সময় গুলোতে ছিলোনা কোন মোবাইল ফোন, শ্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল,কম্পিউটার গেমস- সহ কোন ডিজিটাল বিনোদনের ছোয়া। ছিলো সুধু তখন একমাত্র খেলার অনেক মাঠ । অাজকের এই সময়ে এতো বিনোদনের মাঝেও এই তিন ডানপিটে বালকদের এমন দৃশ্য অামার কাছে অবাক লেগেছে।
ওদের নাম জিজ্ঞেস করলে, কোন উত্তর নেই। আমার দিকে শুধু সবাই এক পলক তাকিয়ে দেখলো ! খেয়াল কেবল গাছের ডালের দিকে।
বললাম তোমাদের নাম কি, কোথায় পড়াশোনা করো তোমরা? সবাই এক সাথে বললো দেবগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
একজন বললো আমার নাম মানব, আরেকজন বললো আমার নাম উৎসব অন্য জনের নাম বললো দুর্জয।
অামি বললাম তোমরা কেন পাখি শিকার করছো? এটাতো অপরাধ! পাখিরা আমাদের দেশের অতিথি। পাখি শিকার করা ঠিক না, এটা চরম অপরাধ।
তোমাদের কি কেউ কখনো পাখি শিকার করতে নিষেধ করেনি! সবাই একসাথে বললো না!
ওদের সবাইকে আমি বললাম তোমরা পাখি শিকার করতে পারো? বলোতো কি কি পাখি আছে আমাদের দেশে, সেসব পাখির নাম বলতে পারো?
ওরা তিনজনই বলতে লাগলো- ঘুঘু, দোয়েল, বক, মাছরাঙ্গা, শালিক, বুলবুলি, চরুই সহ বিভিন্ন পাখির নাম ।
স্কুলে যাও কিনা প্রতিদিন এ প্রশ্ন করলেই বললো, করোনার কারনে আমাদের স্কুল বন্ধ। তাই বিকেল বেলা যখন বাড়ি থেকে বের হই তখন কাউকে কিছু না দেখিয়ে পকেটে করে মার্বেল ও গুলতি নিয়ে এসে পাখি শিকার করি।
আমি যখন চলে আসি তখন ওদের বললাম দেখো তোমরা পাখি শিকার না করে অন্য কিছু নিয়ে সময় কাটাবে। ওরা আমার এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না। বললাম বিকেল বেলা ফুটবল খেলতে পারো, ব্যাডমিন্টন খেলতে পারো, ক্রিকেট খেলতে পারো বা অন্য আরও অনেক খেলা আছে সেগুলো খেলতে পারো। পাখি শিকার করা এটা কোন খেলা নয়।
ওদের বুঝিয়ে বললাম তোমরা যে পাখিটা শিকার করছো, ওই পাখিটারতো বাবা মা আছে, ভাই বোন আছে, তার বাচ্চা অাছে , কি তাইনা? ওদের যদি তোমরা আহত বা হত্যা করো তাহলে তার বাচ্চারা কি খাবে, বলতে পারো?
এমন প্রশ্নে তিন বালক কিছু একটা ভাবতে থাকে। ওই তিন বালককে বুঝিয়ে বলি কখনো পাখিদের গুলতি বা অন্য কিছু দিয়ে আহত বা হত্যা করবে না, বুঝলে।
এ কথা বলে একটু সামনে এগুলেই দেখতে পাই এক বালকের অভিভাবকে। তাকে আমি বললাম আপনাদের সন্তানরা যেন নিয়মিত স্কুলে যায় ও ভালোভাবে পড়াশুনা করে সেই দিকে একটু খেয়াল দিবেন। পাখি শিকারে নিরুৎসাহিত করবেন। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিলেন তাদের সন্তানরা অার পাখি শিকার করবেনা। অন্যদেরও তিনি নিরুৎসাহিত করবেন ।