জীবন একটি যাত্রা। ওই যাত্রায় নানা মোড় থাকে। বাঁক নিতে হয় সময়ে অসময়ে। কখনো চূড়ায় গমণ, কখনো উপত্যকায় বিচরণ। কখনো পাহাড়ে আরোহন, কখনো সমুদ্রে অন্বেষণ। ভালো-মন্দ, হাসি-কান্নায় রঙ বদলায় জীবনের। পরিস্থিতি যাই হোক, জীবন সবসময় গতিময়।

জীবন যাত্রায় আপনি কোথায় আছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোনো না কোনোভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন; এটাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। একদিন নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, পৃথিবীর কোন জিনিসে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন, কিসে পরিপূর্ণতা অনুভব করেছন। এগিয়ে যাওয়ার প্রতিটি ধাপ নিয়ে লিখতে পারেন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইটি। বইয়ে জায়গা পেতে পারে, যা কেউ কোনোদিন আপনাকে বলেনি- নিজের অনুধাবন, অনুভূতি, নিজস্ব চিন্তাভাবনা, কল্পনা; ছোট বেলা থেকে বড় হওয়ার প্রতিটি ঘটনা।

জীবন যাত্রায় অনেক কিছু ঘটে। অনেক কিছু করতে হয়। সঠিক সময়ে যারা উপযুক্ত কাজটি করতে পারেন তারা সফল। যারা পারেন না, তারা হয়তো সে যাত্রায় ব্যর্থ। একটা সময় পরে ব্যর্থতার কারণগুলোও খুঁজে পায় মানুষ। এমন ২০টি বিষয় নিচে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো অধিকাংশ মানুষই অনুধাবন করেন, সময় হারিয়ে বা সুযোগ ফুরিয়ে গেলে।

১. কল্পনাশক্তির ব্যবহার
অধিকাংশ মানুষ নিজের কল্পনা শক্তি ব্যবহারে ভয় পান। সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেন শৈশবের সঙ্গে। নিজেকে সৃষ্টিশীল বলে মনে করেন না। যেমন আছেন সেটাকেই মেনে নেন।

২. আপনার স্বপ্ন শুধু আপনার
আপনার স্বপ্ন শুধুই আপনার। কেউ হয়তো আগ্রহ দেখাবে; পুরণে সহায়তাও করতে পারে। কিন্তু দিন শেষে কারও কিছুই না। নিজের স্বপ্নকে আপনি যেভাবে মূল্যায়ন করবেন সেভাবে আর কেউ করবে না।

৩. বন্ধুবান্ধব
জীবন যাত্রায় আপনি যে পর্যায়ে থাকুন না কেন, বন্ধুবান্ধব তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অধিকাংশ বন্ধু নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকে। আর সেটাও আপনার আগ্রহের কারণে। আপনি যখন এগিয়ে যান অথবা নিজের গুরুত্বের জায়গাগুলো পরিবর্তন করেন, অধিকাংশ বন্ধুও তাই করে।

৪. বয়সের সঙ্গে বাড়ে সম্ভাবনা
মানুষের যখন বয়স বাড়ে, তখন ভাবে দিন দিন কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাস্তবতা বলছে, তাদের বেশি বেশি কাজ করা উচিৎ। কারণ জ্ঞান অর্জনের জন্য অনেক সময় পেয়েছেন তারা। বড় হওয়ার ইচ্ছাটাকে প্রতিদিন একটু একটু করে অভ্যাসে পরিণত করতে হয়। কারণ মানুষ সবকিছু জেনে জন্ম নেয় না।

৫. স্বতঃস্ফূর্ততা সৃজনশীলতার অংশ
আপনি যদি সবসময় সব কিছু একেবারে নিয়ম মেনে, অক্ষরে অক্ষরে করেন তাহলে, হঠাৎ তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে আপনি কখনোই নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন না। আপনার কি মনে পড়ে, ছোট বেলায় কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন? যেকোনো সময়, যেকোনো কিছু করতে পারতেন।

৬. স্পর্শের মূল্য
শেষ কবে বৃষ্টির পানিতে ভিজেছেন? বৃষ্টির সময় পুকুরে সাঁতার কেটেছেন? শেষ কবে ফুটপাতে বসে ইট-পাথর আর ঘাসের ফাটল দেখেছেন? কংক্রিটের বুক চিড়ে কিভাবে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয় ঘাস, খেয়াল করে দেখেছেন? আবার দেখা শুরু করুন; জীবন উত্থানের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন।

৭. পছন্দ অনুযায়ী কাজ করেন না অনেকে
এটা সত্য যে অধিকাংশ মানুষ তার স্বপ্নের মতো বাঁচতে পারেননি। কারণ তারা স্বপ্ন পূরণে যথেষ্ট সংগ্রাম করেননি; স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেননি। বয়স্কদের দেখুন, চারপাশ লক্ষ্য করুন, তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন; সে বিশ্বাস আপনার তৈরি হবে। ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।

৮. প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ চুকিয়ে পড়াশোনা বন্ধ
কাউকে জিজ্ঞাস করুন, ভালো একটা বই তারা শেষ কবে পড়েছে? আমি নিশ্চিত করে বলছি, তারা বলবেন, অনেকদিন ধরে আমার বই পড়া হয়নি।

৯. মানুষ বলে বেশি, শোনে কম
দু’জন লোক পরস্পর কথা বলছেন। একজন বলছেন, অপরজন কিন্তু শুনছেন না। তিনি অপেক্ষা করছেন, পাশের জনকে থামিয়ে, তিনি কখন বলা শুরু করবেন; এটা সবচেয়ে বেশি হাস্যকর।

১০. সৃজনশীলতা এবং অনুশীলন
সমাজ সৃজনশীলতার মূল্যায়ন করে, প্রশংসা করে। মজার বিষয় হচ্ছে ওই সৃজনশীলতা যদি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হয়, তাহলে তা ঠেকাতে নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। আপনি যদি সৃজনশীলতা ধরে রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই নিজের মতো করে অনুশীলন করে যেতে হবে।

১১.সাফল্য আপেক্ষিক বিষয়
শিশুদের আমরা সফল হওয়ার মন্ত্র শেখাই। আসলে এর অর্থ কি? একজনের সফলতা, অন্যজনের কাছে ভিন্ন হতে পারে। নিজের সফলতার সংজ্ঞা নিজে ঠিক করুন।

১২. বাবা-মা বদল সম্ভব না
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চরম দুঃখজনক একটি সত্য অনুধাবন করবেন, চাইলেও বাবা-মা পরিবর্তন করতে পারবেন না। তারা যা, তাই থাকবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি যা করতে চাচ্ছেন, তাতে সম্মতি দিক বা না দিক, এটা বড় কোনো বিষয় নয়। আপনাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন তারা, তাই তাদের ভালোবাসুন; এ ধারা অব্যাহত রাখুন শেষদিন পর্যন্ত।

১৩. সকালে নিজের মুখোমুখিই হন আপনি
সকালে আপনি একমাত্র যার মুখোমুখি হন, সেটা আপনি নিজেই। যখন তরুণ ছিলেন, ভাবনা ছিল, সারা দুনিয়াকে খুশি করার দায়িত্ব আপনার। কিন্তু আপনি তা করেননি। যা করে আপনি আনন্দ পান, তাই করুন। নিজের জন্য যেমন জীবন চান, তেমন জীবনই গড়ুন। নিজের মতো করে দুনিয়া সাজাতে পারলে, প্রত্যেক সকালে তাকেই দেখতে পাবেন, যাকে ভালোবাসেন।

১৪. মনের শান্তি সবচেয়ে বড়
মন থেকে কোনো কিছু করে, আপনি যে শান্তি পাবেন, তা অন্য কিছুতে পাবেন না। সত্যিকার অর্থে ভালোবেসে কিছু করে যে শান্তি পাওয়া যায়, অর্থ বা অন্য কোনো অর্জনের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। নিজের মনকে অনুসরণ করুন; বাকি সব আপনাকে অনুসরণ করবে।

১৫. যতটা জানেন, ততটা সম্ভাবনা
নিজে যতটুকু জানেন, ততটুকু আপনার সম্ভাবনা। জানাশোনা বা জ্ঞানের সঙ্গে আপনার সম্ভাবনা জড়িত। যে নিজের সম্পর্কে জানে এবং নিজেকে অব্যাহতভাবে পরিপক্ক করে, যেখানে চান, তিনি সেখানে পৌঁছাতে পারেন। যে নিজের সম্পর্কে জানে না, কঠোর পরিশ্রম করে না, সংকটে কাটে তার জীবন। নিজের জন্য পছন্দমতো ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যর্থ হয় তারা।

১৬. সন্দেহকারীরা ফিরে আসবে
যারা আপনাকে সন্দেহ করবে, তারা সবসময় আপনার কাছে ফিরে আসবে। যে শিশুটি আপনাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতো, সে আপনার কাছে কাজ চাইতে আসবে। যে মেয়ে আপনার প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে, সে জীবনে একবার হলেও আপনার আহ্বানে সাড়া দেবে। সে আপনাকে সব সময় অনুসরণ করছে। অতীতে সর্বদা এমনই হয়েছে। নিজের প্রতি যত্নবান হোন। সত্যবাদী থাকুন। নিজের বিশ্বাসে অটল থাকুন। প্রত্যেক সন্দেহবাদীরা অবশেষ আপনার কাছে সহায়তা চাইতে আসবে।

১৭. সঙ্গীর প্রতিকৃতি আপনি
সবচেয়ে বেশি সময় যে ৫ জনের সঙ্গে কাটিয়েছেন আপনি তাদের প্রতিবিম্ব। কেউ নিজেকে তৈরি করে না। নিজে নিজে কেউ তৈরি হয় না। আমরা সবাই আয়নার প্রতিচ্ছবি। আমরা অন্যের মধ্যে যা দেখি তা ধারণ করি; এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি যাদের মতো হতে চান, তাদের আশপাশে থাকুন। তাদের সাথে সময় কাটান। তাদের মধ্যকার অনেক বিষয় আপনি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারবেন।

১৮. বিশ্বাস আপনার চাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত
আপনি জীবনযাত্রায় যেখানে আছেন, আশাপাশে যারা আছে, আপনার বর্তমান চাওয়া, সবকিছু মিলে আপনার বিশ্বাস তৈরি হয়। বিশ্বাস স্থায়ী কিছু নয়। এতে ভুল, সঠিক বলে কিছু নেই। সফলতার মতো বিশ্বাসও আপেক্ষিক। একজনের কাছে একেক রকম। এক্ষেত্রে নিজের চাওয়া, পছন্দকে খুঁজে নিতে হবে।

১৯. যেকোনো কিছু হতে পারে, সতর্ক থাকতে হবে
জীবনে ভুল-সঠিক বলে কিছু নেই। সবটাই শিক্ষা। নিজেকে জানতে হবে। আপনার অভ্যাস সম্পর্কে, কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন সে সম্পর্কে সচেতন হোন। এ অভ্যাসগুলো কেন পুনরাবৃত্তি হচ্ছে সে সম্পর্কে জানুন। প্রশ্ন করুন, অভ্যাসগুলো কোথা থেকে এসেছে, কেন আপনি সেগুলো করতে বাধ্য হচ্ছেন?

২০. আপনার লক্ষ্যই আপনার বিজয়
জীবনের অর্থ কি? নিজের হোন, নিজের জন্য করুন, আপনি যাই করুন তার সবই আপনার। আপনি আপনার ভবিষ্যৎ গড়বেন। আপনার হাতেই আপনার পরিবর্তন। নিজের উপর আস্থা রাখুন। মনে রাখতে হবে আপনার ভাস্কর্যের ভাস্কর আপনি নিজে। আপনার প্রতিকৃতির চিত্রশিল্পী আপনিই। নিজেকে আঁকুন, রাঙান; নিজের ইচ্ছেমতো।

তথ্য সংগ্রহঃ শাহজাহান সরকার।
8

Share.
Exit mobile version