#১২৫ বছরের বৃদ্ধাসহ ৫ জনকে পিটিয়ে জখম
#বসতঘর থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, বাবুগঞ্জ :- জেলার বাবুগঞ্জে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে দু’দফায় মারপিট ও ভয়ভীতি দেখিয়ে উচ্ছেদ করে তাদের বসতঘর দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গ্রæপ। হামলাকারীদের বেধড়ক মারপিটে মুক্তিযোদ্ধা ও তার ১২৫ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়িসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শনিবার বাবুগঞ্জ থানায় এবং রোববার বরিশাল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব হাওলাদারের বসতঘরে শুক্রবার দুপুরে এবং গভীর রাতে দু’দফায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সালিশগণ সূত্রে জানা যায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর মৌজার জেএল নং-৭৮/৯৭ পূর্ব ভূতেরদিয়া গ্রামের এসএ ২১০ নম্বর খতিয়ানের ২৪৯০ নং দাগে বসতঘরসহ ২৪৯৩ ও ২৪৯৭ নং দাগের মোট ৪৩ শতাংশ জমি বিগত ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ১৫৪৫ নং সাফ কবলা দলিলমূলে বড়বোন আঞ্জুমান্নেছার কাছে বিক্রি করেন মালেক হাওলাদার। আঞ্জুমান্নেছা আবার ওইদিনই ১৫৪৬ নং দানপত্র দলিলের মাধ্যমে তার নাতি আনোয়ার হাওলাদারকে বসতঘরসহ সম্পূর্ণ জমি দান করেন। আনোয়ার তার নানির দান করা বসতঘরে নিজের মুক্তিযোদ্ধা পিতা ওহাব হাওলাদার ও মা রুনু বেগমকে নিয়ে বসবাস শুরু করতে চাইলে তাতে বাঁধা দেন অবৈধ দখলদার ফজলু হাওলাদার। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় জমিসহ ওই বসতঘর দখল করে রাখেন তিনি।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদার বাবুগঞ্জ থানায় অভিযোগ করলে ওসি মোঃ মিজানুর রহমান কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারীকে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গ্রাম আদালতে সালিশের মাধ্যমে মিমাংসা করার দায়িত্ব দেন। পরে উভয় পক্ষের মানিত সালিশ হারুনুর রশীদ খান, শাহজাহান মৃধা ও আজিজ সরদার তাদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদারের পক্ষে রায় দেন। প্রতিপক্ষ ফজলু হাওলাদারকে দখলকৃত বসতঘরসহ সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়ার জন্য রায়ের রোয়েদাদ দিলে মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদার তার পরিবার নিয়ে নিজের বসতঘরে ওঠেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ফজলু হাওলাদার তার দলবল নিয়ে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদারের বসতঘরে সশস্ত্র হামলা চালান।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব হাওলাদার জানান, ফজলু হাওলাদারের নেতৃত্বে দেশিয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুরাদ ও সাকিবসহ ৬-৭ জন তাদের বসতঘরে হামলা চালান। এসময় ঘরে তারা ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে মারপিট, ভাংচুর এবং লুটপাট করেন। তাদের বেধড়ক মারপিটে মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদার (৭৫), তার ১২৫ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ি আঞ্জুমান্নেছা, কন্যা ফাতেমা (২৮), সাজেদা আক্তার (২৫) এবং পুত্রবধূ জেসমিন বেগম (২৭) আহত হন। আহতদের স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার সময় প্রতিপক্ষরা তাদের বসতঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে স্বর্ণের চেইন এবং নগদ ৮০ হাজার টাকা লুটে নেয় বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদার।
মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদারের কন্যা ফাতেমা জানান, শুক্রবার দুপুরে তাদের বসতঘর থেকে উচ্ছেদের জন্য ওই সন্ত্রাসী হামলার চালানোর পরে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত সেই সুযোগে আবার শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ফজলু হাওলাদারের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় তাদের বসতঘরে হামলা চালানো হয়। এসময় বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদারকে সপরিবারে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে তারা। তবে তাদের ডাক-চিৎকারে গ্রামবাসী এগিয়ে এলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ফজলু হাওলাদার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী বলে অভিযোগ করেন ফাতেমা।
এদিকে এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে অভিযুক্ত ফজলু হাওলাদার ওই বসতঘর এবং জমি নিজের বলে দাবি করেন। তবে তিনি তার দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ কিংবা কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। গ্রাম আদালতের সালিশের রায়ের পরেও কীভাবে ওই বসতঘর নিজের বলে দাবি করছেন-এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ফজলু হাওলাদার। সালিশের রায়ের বিরুদ্ধে ছানি (আপীল) করেছেন বলে দাবি করলেও এর প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী বলেন, ‘ফজলু হাওলাদারকে ইন্ধন দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। বিরোধ মিমাংসায় অসংখ্যবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ওই বাড়ির হাসিব নামের অতি পন্ডিত এক স্কুলশিক্ষকের কারণে কয়েক বছর ধরে চলমান বিরোধের নিষ্পত্তি হচ্ছে না। সর্বশেষ উভয় পক্ষের মানিত সালিশের মাধ্যম্যে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জমি মাপ দিয়ে রায়ের রোয়েদাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা অবশ্যই দুঃখজনক।
বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বসতঘরসহ ওই বিরোধীয় ৪৩ শতাংশ সম্পত্তি ফজলু হাওলাদার গং জোরপূর্বক নিজেদের অবৈধ দখলে রাখার চেষ্টা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার সেখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীয় জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এরমধ্যে আবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলার অভিযোগ এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা ওহাব হাওলাদারের সম্পত্তি কেউ জবরদখল কিংবা সেখানে শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’