রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মেশানোর কারণে মৃত্যু -পুলিশ৪ অ্যালকোহল ব্যবসায়ী গ্রেফতারঃ মদ জব্দ
বিশেষ প্রতিনিধি।।বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে ১৮ জন মারা যাওয়ার ঘটনায় চারজন অ্যালকাহোল ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। তবে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূইয়া ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বুধবার বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূইয়া বগুড়া সদর থানা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি মদ্যপাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিজের মালিক নুরুন্নবী ওরফে নুর নবী (৫৮), শহরের গালাপট্টির মুন হোমিও হলের মালিক ও সদরের ছোট কুমিড়া গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের পুত্র আব্দুল খালেক (৫৫), গালাপট্টি এলাকার হাসান হোমিও হলের কর্মচারী সদরের অকাশতারা গ্রামের আবু জুয়েল ওরফে জুয়েল (৩৫) ও করতোয়া হোমিও হলের মালিক সদরের নাটাইপাড়ার মৃত তোসাদ্দেক হোসেনের পুত্র শাহিদুল আলম সবুর (৫৫)। পুলিশ সুপার বলেন, মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানে অবৈধভাবে অ্যালকাহোল সরবরাহ করেছেন। এসব মৃত্যুর ঘটনায় মৃত রঞ্জু মিয়ার ভাই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে অ্যালকাহোল পানে গত তিন দিনে বগুড়া সদরে ১৪জন, শাজাহানপুর ২ ও সারিয়াকান্দি থানায় ২জন করে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮ জন মারা গেছেন। তবে এসপি বলেছেন, বিষাক্ত মদ বা রেক্টিফাইট স্পিরিট পানে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপর মৃতদের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
বগুড়া জেলা পুলিশের তালিকায় বিষাক্ত মদপানে মারা গেছেন, বগুড়া শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়ার পাদুকা শ্রমিক প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), তার ভাই রামনাথ রবিদাস (৬০), প্রেমনাথ রবিদাসের পুত্র সুমন রবিদাস (৩০), ফুলবাড়ী দক্ষিণপাড়ার দিনমজুর মো: পলাশ মন্ডল (৩৫), ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার আব্দুল জলিল (৬৫), পুরান বগুড়া জিলাদারপাড়ার রমজান আলী (৬৫), ফাঁপোড় পশ্চিম পাড়ার রিকশাচালক জুলফিকার আলী (৫৫), কাটনারপাড়ার হটু মিয়া লেনের সাজু প্রামাণিক (৪৯)। এই ৮টি লাশের ময়না তদন্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া স্থানীয়দের তথ্য মতে মৃতরা হলেন, জেলা সদরের কাটনারপাড়া হটুমিয়া লেন শ্রমিক মোজাহার আলী (৭৫), কাহালু পৌর এলাকার অটোরিকশার চালক আবুল কালাম (৫০), পুরান বগুড়ার ক্ষিতিশ ওরফে ভেলু (৬০), বগুড়া সদরের ফাঁপোড়ের দিলবর রহমার দিলীপ (৬০), ছিলিমপুর দক্ষিণপাড়ার মো: রফিক (৪৫) ও ভবেরবাজার এলাকার মো: আলমগীরও (৫০) মদপানে মারা গেছে।
এছাড়া জেলার শাজাহানপুর থানা পুলিশ উপজেলার দুরুলিয়া গ্রামের মেহেদি হাসান (২৫) ও উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামের আবদুল আহাদ (৩০) মদপানে মারা যাওয়ারি অভিযোগে লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর পুলিশ জানিয়েছেন, এদের মধ্যে মোজাহার আলীসহ দুইজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
বগুড়া সদর থানা সুত্রে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি রাতে বগুড়া সদর থানার পুরান বগুড়ায় একটি বিয়ের বাড়িতে বেশ কয়েকজন বিষাক্ত মদ পান করেন। এছাড়া সদর থানার ভবের বাজার, কালিতলা, ফুলবাড়ি ও কাটনারপাড়া এলাকায় আলাদা স্থানে বিষাক্ত মদপান করে বেশ কয়েজন। বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির জানান, ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে চারজন হোমিও ব্যবসায়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মেশানোর কারণে সেটি বিষাক্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে পুলিশ ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ে শহরের পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিজ, পুনম হোমিও হল, মুন হোমিও হল, করতোয়া হোমিও হলে পৃথক অভিযান চালায়। এসব স্থান থেকে যৌন উত্তেজক ওষুধ, রেকটিফাইড স্পিরিটসহ সহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ জব্দ করেছে তারা। তবে তার পরিমান জানা যায়নি। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার হাটফুলবাড়ী ইউনিয়নের ফুলবাড়ী বাজারের হোমিও চিকিৎসক সিরাজুল ইসলামের নিকট থেকে রেক্টিফাইড স্পিরিট কিনে রাতে পান করে নিজ নিজ বাড়ীতে মারা গেছে ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার চাঁন মিয়ার পুত্র হোটেল মালিক ইউসুফ আলী (৫০) ও ফুলবাড়ী দক্ষিণ পাড়ার ফজলু মিয়ার পুত্র রাজু মিয়া (৩৬)। একই সময় অসুস্থ্য হয়েছে মৃত রাজুর ভাই শফিকুল ইসলাম (৪০)।
সারিয়াকান্দি থানার ওসি মিজানুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে মদ পানে মৃত্যুর বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্র গুলো মদ পানে বিষয়টি জানিয়েছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাপসাতালের উপপরিচালক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, বিষাক্ত মদ পানে অসুস্থ্য হয়ে বর্তমানে তাদের হাসপাতালে ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।