রাঙা প্রভাত ডেস্ক।।আমি ওই টাকা ফেরত দেব। কিন্তু সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বৃহস্পতিবার আমার বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার যুবতী মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে’

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সুদে আনা ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় মা-মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় নির্যাতিত নারী (মা) বাদী হয়ে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার ১১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার সিরাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নির্যাতিত মা ও মেয়ে হলেন কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০) ও তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমা (১৬)। মমতাজ স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার মেয়ে ঝুমা মনিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৫ বছর আগে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বন বিভাগের জমিতে বসবাস করে আসছেন। জীবিকার তাগিদে ওই নারী পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তবে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোরকমে মা-মেয়ের সংসার চলছে। সম্প্রতি সংসারের অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পেতে মমতাজ এক “জিনের বাদশা”র খপ্পরে পড়েন। সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে দেবে এমন প্রতিশ্রুতিতে জিনের বাদশা তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে।
নির্যাতনের শিকার নারী জানান, জিনের বাদশার ওই টাকা যোগাড় করতে তিনি স্থানীয় গফুর ড্রাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে ঋণ নিয়েছেন। তবে ঋণের টাকা তিনি পরিশোধ করতে পারেননি। টাকা ফেরত দেয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম এক মাসের সময় দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি ওই টাকা ফেরত দেব। কিন্তু সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বৃহস্পতিবার আমার বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার যুবতী মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে।”
পুলিশ স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করে। ঘটনার পর অভিযুক্তরা পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কালিয়াকৈর থানায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত আব্দুল গফুর ড্রাইভার জানান, তাদের টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেয়া হয়েছে। কাউকে মারধর বা গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম সিকদার জানান, ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করছে। পরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। ঘটনাটি দুঃখজনক।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে নির্যাতিত মা-মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে অভিযোগ দেয়ার পর মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় মূল পরিকল্পনাকারী সবুজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Share.
Exit mobile version